মসজিদ নির্মাণের ফযীলত -মসজিদের প্রতি আসক্তি ও তথায় অবস্থানের ফযীলত

মুসলিমদের সমাজের মূল কেন্দ্র হচ্ছে মসজিদ। এ কারণে আমাদের রাসূল সাঃ হযরত মুহাম্মদ হিজরতের প্রথম দিনেই মসজিদ নির্মাণের কাজে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। তিনি যখন মদিনায় হিজরত করেন তখন তিনি কুবা নামক স্থানে ইসলামের প্রথম মসজিদ নির্মাণ করেন। এ থেকে আমরা বুঝতে পারি মসজিদ নির্মাণের ফযীলত কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এরপরে যখন তিনি মদিনায় পৌঁছে যান তখন মসজিদ-ই-নববী স্থাপন করেন। সেখান থেকে আমাদের মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ ইসলামের জ্যোতি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেন।

মসজিদ নির্মাণের ফযীলত

আল্লাহ তালার সন্তুষ্টির জন্য যে ব্যাক্তি মসজিদ নির্মাণ করবে আল্লাহ তা'আলা তার জন্য জান্নাত অনুরূপ ঘর নির্মাণ করে দিবেন। আরো শোনা যায় যে, যে ব্যক্তি আল্লাহ সন্তুষ্টির জন্য পাখির বাসা পরিমান কিংবা তার চেয়েও ছোট মসজিদ নির্মাণ করবে তার জন্য আল্লাহ জান্নাতে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করবেন। এগুলো থেকেই আমরা বুঝতে পারছি যে মসজিদ নির্মাণের ফযীলত কত গুরুত্বপূর্ণ।

বিভিন্ন আলেমগণেরা বলেছেন যারাই মসজিদ নির্মাণে অংশগ্রহণ করবে প্রত্যেকেই প্রত্যেকের অংশগ্রহণ পরিমাণ অনুযায়ী প্রতিদান পাবে। মসজিদ নির্মাণের ফযীলত অত্যাধিক ভাবে ফুটে উঠেছে শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়ার এই কথা থেকে। তিনি আরো বলেছেন যে মসজিদ হল উম্মাহুর ইবাদত গা ও মিয়ন কেন্দ্র। আমাদের নবী মুহাম্মদ (সা.) প্রতিষ্ঠিত মসজিদের কর্মসূচি ছিল সালাত আদায় করা জিকির করা নেতৃত্ব ও সামাজিক রীতিনীতি শিক্ষা দেওয়া।

মসজিদে মুসলিমরা একত্রিত হয়ে তাদের ধর্মীয় ও বৈশ্বিক যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে আলোচনা করতে পারে। মসজিদ হল ঈমানের ইস্পাতকঠিন দুর্গ। এটি হলো তাহাদের বাণী প্রচারের কেন্দ্র। মসজিদ হলো সেই বিদ্যালয় যে জায়গা থেকে গড়ে উঠেছিল এই উম্মাহর প্রথম প্রজন্ম। সেকালে জ্ঞান চর্চার সর্বোচ্চ কেন্দ্র ছিল মসজিদ।

যদি মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) হিজরতের পর মদিনায় এসে সর্বপ্রথম মসজিদ নির্মাণের কর্মসূচি হাতে নিয়েছিল।এ সময় মুসলিমরা যে অঞ্চলেই যুদ্ধ করে বিজয় লাভ করত সেখানে তারা মসজিদ নির্মাণ করেছেন। পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে মুসলিম ঐতিহ্যের সাক্ষী হিসাবে আজও জ্বলজ্বল করছে সেই সব মসজিদগুলো।

মসজিদ নির্মাণের নিয়ম

মসজিদ নির্মাণের নিয়ম জানার আগে সবার মসজিদ নির্মাণের ফযীলত সম্পর্কে একটু হলেও জানতে হবে। কোন মুসলিম ব্যক্তি থাকতে কোন কাফের মিস্ত্রি শ্রমিক দ্বারা মসজিদ নির্মাণ করা বৈধ নয় । মুসলিমদের কোন ক্ষতির আশঙ্কা না হলে মসজিদ ও মাদ্রাসার জন্য অমুসলিমদের নিকট থেকে তারা খুশি হয়ে হালাল অর্থ সাহায্য দিতে চাইলে তা গ্রহণ করা বৈধ হবে। 

মসজিদ নির্মাণের নিয়ম গুলোর মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য কাজ হচ্ছে, মসজিদ নির্মাণ হবে মুসলিমদের নিজস্ব পবিত্র মাল দ্বারা। মসজিদ নির্মাণের কাজে যাকাত ব্যবহার বৈধ নয়। এটির কারণ হচ্ছে যাকাত হলো গরীব মিসকিন প্রভৃতি ৮ প্রকার খাতে ব্যয়িতব্য অর্থ। মসজিদ এ পর্যায়ে পড়ে না। ওয়াকফের যেকোনো বস্তু ও বিক্রি করা যায় না, দান করা যায় না এবং কেউ তার ওয়ারিস হতেও পারে না।

 মসজিদ নির্মাণের সময় যদি কোন ওয়াক্তের জিনিস এ অবস্থায় পৌঁছে যায় যাতে কোন প্রকার উপকারী অবশিষ্ট থাকে না এবং তারমিম ও সংস্কার সম্ভব না হয় অনুরূপভাবে কোন মসজিদ সংকীর্ণ হলে এবং প্রশস্ত করার জন্য জায়গা না থাকলে সেই ওয়াকফ বাম মসজিদের জায়গা বিক্রি করে সেই অর্থে অন্য কোন উপযুক্ত স্থানে মসজিদ নির্মাণ করা বৈধ। কারণ মসজিদ বা স্থান খামোখা ফেলে রাখা নিষ্ফল।

এক মসজিদ এর আসবাব পত্র অন্ন মসজিদ এ লাগানো বৈধ।মসজিদের বর্ধিত স্থান মসজিদের অন্তর্ভুক্ত। উভয় জায়গার মানি সমান। এজন্য আমাদের হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর নির্মিত মসজিদের নামাজ পড়ে যেসব লাভ করা হয় বর্তমানে ওই মসজিদের বর্ধিত স্থানসমূহ নামাজ পড়লেও ওই একই পরিমাণ সওয়াব লাভ হবে। অবশ্য প্রথম কাতার সময়ের ফজিলত তো পৃথক আছেই। ইতিমধ্যে আমরা মসজিদ নির্মাণের ফযীলত এবং মসজিদ নির্মাণের নিয়ম সম্পর্কে জেনে গেছি।

মসজিদের প্রতি আসক্তি ও তথায় অবস্থানের ফযীলত

আল্লাহর রাসূল বলেন আল্লাহ তায়ালা সাত ব্যক্তিকে সেদিন তার আরশের ছায়া দান করবেন যেদিন তার ছায়া ব্যতীত আর কোন ছায়া থাকবেনা। যখন কোন ব্যক্তি জিকিরও নামাজের জন্য মসজিদে অবস্থান করা শুরু করে তখনই আল্লাহ তাকে নিয়ে সেইরূপ খুশি হন যে রূপ প্রবাসী ব্যক্তি ফিরে এলে তাকে নিয়ে তার বাড়ির লোক খুশি হয়। মসজিদ প্রত্যেক পরহেজগার ব্যক্তিদের ইবাদত করার ঘর।

আর যে ব্যাক্তির ঘর মসজিদ সেই ব্যক্তির জন্য আল্লাহ আরাম করুণা এবং তার সৃষ্টির ও জান্নাতের প্রতি পুলসিরাত অতিক্রম করে যাওয়ার দায়িত্ব নিয়েছেন। যখন তোমাদের মধ্যে কেউ নিজ ঘরে অজু করে মসজিদে আসে তখন ঘরে না ফেরা পর্যন্ত সেই নামাজেই থাকে। সুতরাং সে যেন হাতের আঙ্গুলগুলোর মাঝে খাজা খাজি না করে। যে ব্যক্তি ওজু করে মসজিদে আসে সে ব্যক্তি আল্লাহর মেহমান।

মেজবানের দায়িত্ব হল মেহমানের খাতির করা। মসজিদ নির্মাণের ফজিলত এর পাশাপাশি খেয়াল রাখতে হবে যে ইতিকাফে বসা ছাড়া অন্যান্য দিনে মসজিদের মধ্যে নামাজের জন্য কোন এক কোন বা স্থান কে নির্দিষ্ট করা বৈধ নয়। কারণ মহানবী (সা.) নিষেধ করেছেন কাকের দানা খাওয়ার মত নামাজ পড়তে নামাজে হিংসা জন্তুদের মত হাত বিছিয়ে বসতে এবং উট যেমন এক স্থানকে নিজের জায়গা বানিয়ে নেয়, তেমনি মসজিদে নির্দিষ্ট জায়গা বানাতে নিষেধ করেছেন।

পৃথিবীর প্রথম মসজিদ নির্মাণের ইতিহাস

মুসলমানদের ইবাদত করার সবচেয়ে পবিত্র স্থান হচ্ছে মসজিদ। ইতিমধ্যে আমরা মসজিদ নির্মাণের ফযীলত এবং মসজিদের প্রতি আসক্তি সম্পর্কে একটু হলেও ধারণা পেয়ে গেছি। এখন আমরা জানবো পৃথিবীর প্রথম মসজিদ নির্মাণের ইতিহাস। যেখানে মুসলিম পুরুষরা আল্লাহর নিকট তো লাভের জন্য ইবাদত রত থাকেন সেই জায়গাতেই হচ্ছে মসজিদ।

তবে কিভাবে তৈরি হয়েছিল পৃথিবীর প্রথম মসজিদটি আপনি কি জানেন না জানে আমার এই পোস্টটি অবশ্যই পড়ুন। মুসলমানদের মসজিদ নির্মাণের ধারণা শুরু হয় মনে হয় হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর ইসলাম প্রচারের সময়কাল থেকে। পবিত্র মদিনার দক্ষিণ দিকে অবস্থিত কুবা বা মসজিদে কিবলাতাইন হলো পৃথিবীর সর্বপ্রথম মসজিদ। 

বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় এখানে আসার পর এই মসজিদগুলো তিনি তৈরি করেন। তখনো ফিলিস্তিনের জেরুজালেমে অবস্থিত পবিত্র বায়তুল মুকাদ্দাস বা মসজিদে আকসার দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করতেন। তারপর এই পবিত্র কুবা মসজিদের যোহরের নামাজ চলাকালীনই কিবলা পরিবর্তনের ওই এসেছিল। আরো উল্লেখ রয়েছে কুবা মূলত একটি স্থানীয় প্রাচীন কুপের নাম।

আমাদের মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) অনেকগুলো মসজিদ নির্মাণ করেছে। এজন্য আমাদের মসজিদ নির্মাণের ফজিলত সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখতে হবে।মহানবী (সা.) হিজরত করে মদিনাতে গিয়ে কুবা এলাকায় আবু আইয়ুব আনসারী (রা) এর বসতবাড়িতে অবস্থান করেন।পরে মসজিদে নবীর খুব কাছে স্থানীয়ভাবে বসবাস শুরু করলেন প্রতি শনিবার মসজিদুল কিবলা তাইনে নামাজ আদায় করতেন নবী (সা.)। দুই রাকাত নামাজ আদায়ের পর আসমাদি ফরমান আসে।

যাতে আল্লাহর তরফে নবী কে নির্দেশ দেওয়া হল কিবলা পরিবর্তন করার জন্য। ওই অবস্থাতে যোহরের ফজর নামাজের ভিতরে কিবলা বদল করে বাইতুল্লাহর দিকে মুখ ফিরিয়ে বাকি দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন নবীজি। তাকে অনুসরণ করে শাহবাগণ ও মুসল্লিরা দিক পরিবর্তন করে নেন। মদিনায় মসজিদে নবীর পর কুবা হলো দ্বিতীয় বৃহত্তম ও মর্যাদাশীল মসজিদ।এ মসজিদের ২০ হাজার মুসল্লী নামাজ আদায় করতে পারেন একসঙ্গে।

আমার মতামত

আপনারা সকলেই মসজিদ নির্মাণের ফযীলত এবং মসজিদ নির্মাণের প্রতি আসক্তি ও এখানে অবস্থানের ফজিলত সম্পর্কে অবগত হয়েছেন। আমরা এ পোষ্টের মাধ্যমে মসজিদ নির্মাণের ফযীলত সম্পর্কে যথেষ্ট জেনেছি। একটি মসজিদ মুসলিম ধর্মের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গা। যদি আমার পোস্টটি আপনাদের ভাল লাগে তাহলে আমার পোস্টটি আপনার ফ্রেন্ডের সঙ্গে শেয়ার করতে পারেন এবং আপনার একটি সুন্দর কমেন্টের মাধ্যমে আমাকে আরো উৎসাহিত করতে পারেন। সবার কাছে একটি অনুরোধ থাকবে সবাই আমার ওয়েবসাইট টি ফলো করবেন। এরকম আরো অনেক পোস্ট আমার ওয়েবসাইটে পাবলিশ করা আছে সবাইকে সেগুলোকে দেখার আমন্ত্রণ জানিয়ে আমার কথা শেষ করলাম।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url