ধূমপানের ক্ষতিকর দিকগুলো এবং ধূমপান ছাড়ার ঘরোয়া উপায়
ধূমপানের ক্ষতিকর দিকগুলো এবং ধূমপান ছাড়ার ঘরোয়া উপায় গুলো আজকে আপনাদের
সঙ্গে আলোচনা করা হবে। ধূমপান একটি মারাত্মক ক্ষতিকর ও বিপজ্জনক অভ্যাস।
ধূমপান আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এর সম্পর্কে জানেনা এমন লোক খুঁজে পাওয়া
যাবে না। কারণ সিগারেটের প্যাকেটে লেখা থাকে স্বাস্থ্যবিধি সতর্কীকরণ
ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তারপরও আমরা দেখি যে অনেক অধিক পরিমাণ
ধূমপান করছে। অধিকাংশ ধূমপায়ী ধূমপানের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্ক জানে
না।
ধূমপান একটি খারাপ অভ্যাস। এর জন্য বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ৩৫ লক্ষ মানুষ মারা
যায়। ১৯৫০ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত শুধু উন্নয়নশীল দেশগুলোতে মারা গেছে
প্রায় ৬ কোটি লোক এদের অধিকাংশ লোকই ছিল যুবক শ্রেণির। সিগারেটের ধোঁয়ায় যেই
নিকোটিন থাকে তা হলো হিরোইন অপেক্ষা শক্তিশালী।
আরো পড়ুনঃ মোবাইল ফোন ব্যবহারের ক্ষতিকর দিকগুলো
ধূমপানকারী দেশ ও সমাজে সব মানুষের কাছে একজন ঘৃণিত ও ব্যক্তি হিসেবেই
পরিচিত । ধূমপান হল একটি অপচয় আর আল্লাহতালার অপচয় সম্পর্কে বলেছেন তোমরা
অপচয় করো না, অপচয় কারী শয়তানের ভাই।ধূমপানের ক্ষতিকর দিকগুলো এর মধ্যে
একটি অন্যতম ক্ষতি হচ্ছে এটি মানুষের জ্ঞান বুদ্ধি লাভ করে। এর কারণে সে
জানে ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তারপরও সে ধূমপান করে।
ধূমপানকারী তার ছেলে সন্তান এবং উত্তরাধিকারী সূত্রের জন্য একটি আদর্শহীন
ব্যক্তিতে পরিণত হয়। ধূমপানের অভ্যাস একজন মানুষকে সিয়াম পালন হতে বিরত রাখে।
কারণ সিয়াম পালন করলে সে ধূমপান করতে পারবে না। ধূমপানের ক্ষতিকর দিকগুলো
এর মধ্যে আরেকটি অন্যতম ক্ষতিকর দিক হচ্ছে এটি মানুষের অপমৃত্যু ঘটায়।
ধূমপানের কারণে শরীরের তাপ বৃদ্ধি প্রহার জ্বালাপোড়া ইত্যাদি দীর্ঘমেয়াদী
রোগব্যাধি দেখা যায়। ধূমপানের কারণে রক্তনালী গুলো দুর্বল হয়ে যায় এবং অনেক
সময় তার রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ধূমপানকারীদের ফুসফুস, মুত্রথলি,
ঠোঁট,মুখ, জিব্বা ও কণ্ঠনালী কিডনি ইত্যাদির ক্যান্সার হয়।ধূমপানের ক্ষতিকর
দিকগুলো এর মধ্যে আরেকটি অন্যতম ক্ষতিকর দিক হচ্ছে এটি মানুষের স্মরণ শক্তি
কমিয়ে দেয় এবং মনোবল দুর্বল করে দেয়। ইন্দ্রিয় ক্ষমতা দুর্বল করে দেয়।
ধূমপান ছাড়ার ঘরোয়া উপায়
ধূমপান ছাড়ার ঘরোয়া উপায় গুলো হচ্ছে আদা , আমলকির গুড়া ,লেবু ,ব্ল্যাক
সল্ট ও মধু মিশিয়ে জ্বাল দিয়ে ঘন করে একটি ট্রেতে ট্যাবলেটের আকারে সাজান।
ট্যাবলেট গুলো রোদে শুকিয়ে একটি বায়ু নদী পাত্রে রাখুন। পাঁচ সাত মিনিট পরে এটি
খেলে ধূমপানের তাড়না নিয়ন্ত্রণে থাকবে। সকালে ঘুম থেকে উঠে মর্নিং ওয়ার্ক ও
যোগব্যায়াম ধূমপান ত্যাগ করতে সহায়ক হতে পারে।
ধূমপান ছাড়ার ঘরোয়া উপায় এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আঙ্গুরের
রস। এটি নিকোটিনের কারনে শরীরের ভেতরে জমতে থাকা টনিক দূর করে। ফুসফুসের
কর্ম ক্ষমতা বাড়ায় এছাড়া সিগারেট খাওয়ার ইচ্ছা ও কমাতে শুরু করবে।ধূমপানের
নেশা ছাড়াতে ও টস খেতে পারেন। দুই কাপ ফুটানো পানির সঙ্গে এক চামচ ওটস
মিশিয়ে সারা রাত রেখে দিন।
পরের দিন সকালে পুনরায় দশ মিনিট ফুটিয়ে নিন প্রতিটি খাবারের পর অল্প করে খেতে
থাকুন এতে শরীরের থেকে নিকোটিন বেরিয়ে যায়। সে সঙ্গে কমে যাবে সিগারেট
খাওয়ার ইচ্ছা শক্তিও। মধুতে থাকা ভিটামিন এনজাইম এবং প্রোটিন শরীর থেকে নিকোটিন
বের করে দেয় ধূমপান ছাড়ার ঘরোয়া উপায় হিসেবে আমরা নিয়মিত মধুও পান
করতে পারি।
ধূমপানের উপকারিতা
ইতিমধ্যে আমরা ধূমপানের ক্ষতিকর দিকগুলো এবং ধূমপান ছাড়ার ঘরোয়া উপায় গুলো
সম্পর্কে জেনেছি। এখন আমরা আলোচনা করছি ধূমপানের উপকারিতা নিয়ে। আমি জানতাম যে
ধূমপানের সেরকম কোন উপকার থাকে না। কিন্তু আপনারা এটা যেন অবাক হবেন যে ধূমপানের
কিছু উপকারিতা রয়েছে। যারা ধূমপান করে তারা প্রায়ই বলে যে সিগারেট খেলে নাকি
মানসিক চাপ দূর করতে সাহায্য হয়।
যাইহোক প্রাপ্তবয়স্ক যারা ধূমপান করে তাদের মানসিক চাপের মাত্রা তুলনামূলকভাবে
অন্যদের থেকে বেশি হয়। যারা কিশোর আছেন তারা জানাচ্ছেন যে ধূমপানের নিয়মিত
অভ্যাস বৃদ্ধির সাথে সাথে মানসিক চাপ বেড়ে যায় এবং ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগ করার
পর মানসিক চাপ কমে যায়। ধূমপান আমাদের ওজন কমানোর ক্ষেত্রেও সাহায্য করে।
যারা অতিরিক্ত ধূমপান করে তাদের সে মতো ক্ষুধা পায় না । তাই খুদা না লাগলে
খাওয়া কমে যায় । সেই সাথে কমে যায় ওজন তবে যাদের ওজন। এমনিতেই কম তারা যে
ধূমপান করলে তাদের কঙ্কালসার হয়ে যেতে পারে সে নিয়ে কোন সন্দেহ নেই।
ধূমপান ছাড়ার পর শরীরে যা ঘটতে পারে
ধূমপানের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। কিন্তু জানার পরেও আসক্তির
কারণে এটি অনেকেই থাকতে পারে না। আবার অনেকে ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন কিন্তু
নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন তবে মাথায় রাখতে হবে যে যে কোন অভ্যাস থেকে
বেরিয়ে আসা অনেকটাই কঠিন। তাই চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে আমাদেরকে। কারণ এটি
প্রতিনিয়ত আপনার স্বাস্থ্যের ক্ষতি করেই যাচ্ছে ।
ধূমপান ছেড়ে দেওয়া কঠিন হতে পারে তবে অসম্ভব কিছু নয়। ধূমপান ছাড়ার ঘরোয়া
উপায় গুলো আপনারা প্রতিদিন মেনে চলবেন তাহলে দেখবেন আপনাদের ধূমপান আগের
থেকে অনেকটাই কমে এসেছে। হঠাৎ করে ধূমপান ছেড়ে দিলে আপনার কাশি হতে পারে এটি
শুনতে অদ্ভুত হলোও এটাই বাস্তব। এই কারণে আপনি কয়েক সপ্তাহ ধরে কাশি সম্মুখীন
হতে পারেন কারণ ধূমপান ছাড়ার পর বেশ কিছুদিন পর্যন্ত নিকোটিন আপনার শরীরে থেকে
যায়।
ধূমপানের ক্ষতিকর দিকগুলো এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে খুদা কমে যাওয়া। কিন্তু আপনি
যখন ধূমপান ছাড়ার ঘরোয়া উপায় গুলো মেনে চলবেন তখন আপনার ঘনঘন খুদা লাগতে পারে।
এমনকি আপনার ওজনও বেড়ে যেতে পারে। তবে হতাশ হবেন না কারণ এটি মাত্র কয়েক সপ্তাহ
পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে এরপর আবার সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
বাংলাদেশের কত শতাংশ মানুষ ধূমপান করে
ইতিমধ্যে আমরা সকলে ধূমপানের ক্ষতিকর দিকগুলো এবং ধূমপান ছাড়ার ঘরোয়া উপায়
সম্পর্কে জেনে এসেছি। বিশ্বে বেশি ধূমপান করে যেসব দেশের মানুষ তাদের মধ্যে
বাংলাদেশের অবস্থান হচ্ছে অষ্টম। বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার ৩৯.১% মানুষ ধূমপান
করে। এদের মধ্যে ২১.৯ শতাংশ ছেলে ১৭ .৭ শতাংশ মানুষ হচ্ছে মেয়ে। এখান থেকে বোঝা
যায় যে ছেলেদের থেকে মেয়েরা কোন অংশে পিছিয়ে নেই।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক অফিসের রিপোর্ট অনুযায়ী
বাংলাদেশের ২০১৮ সালে তামাক ব্যবহারজনিত রোগে আক্রান্ত হয়েছে ১ লক্ষ ৬১ হাজারেরও
বেশি মানুষ। এ হিসাব অনুযায়ী বুঝা যায় যে বাংলাদেশে গত পাঁচ বছরে প্রায় ৮ লক্ষ
৫ হাজারেরও বেশি লোক মারা গেছে এই তামাক দ্রব্য সেবনের কারণে।
আমার মতামত
ধূমপানের ক্ষতিকর দিকগুলো এবং ধূমপান ছাড়ার ঘরোয়া উপায় গুলো আমি পড়ার পরে যা
বুঝলাম। আমরা সবাই ধূমপান থেকে বিবিরত থাকবো। এবং মানুষদেরকে ধূমপানের ক্ষতিকর
দিকগুলো সম্পর্কে জানাবো। সবাইকে সচেতন করে দেওয়ার চেষ্টা করব।
ধূমপান ছাড়ার ঘরোয়া উপায় গুলো সম্পর্কে মানুষকে অব্যাহত রাখবো। সবাই মিলে
একসঙ্গে আমরা আমাদের দেশকে ধূমপান মুক্ত দেশ হিসেবে করে তোয়ার প্রচেষ্টার
লক্ষ্যে কাজ চালিয়ে যাব। ধূমপান আমাদের শরীরের অনেক রকমের ক্ষতি করে এবং
আমাদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url