কৃষি ব্যাংকে লোন পাওয়ার উপায় ও সুদের হার কত বিস্তারিত ২০২৪
প্রিয় পাঠক আমরা আজকে কৃষি ব্যাংকের লোন সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণ নেব। আমি চেষ্টা
করব কৃষি ব্যাংকের লোন এর যোগ্যতা, কৃষি ব্যাংকের লোন পেতে হলে কি কি কাগজপত্র
দরকার ও কৃষি ব্যাংকের লোন পদ্ধতি। কৃষি ব্যাংকের লোন পরিশোধের নিয়ম এবং সুদের
হার সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব।
আপনারা অনেক সময় কৃষি ব্যাংকে লোন পাওয়ার উপায় সম্পর্কে এবং কি কি কাগজপত্র
দাখিল করলে কৃষি ব্যাংকে লোন পাওয়া সম্ভব সেই সম্পর্কে জানার আগ্রহ প্রকাশ করে
থাকেন। কিন্তু সঠিক তথ্য না জানার অভাবে আপনি কোন ভাবেই ব্যাংক থেকে লোন পাস করতে
পারেন না। অনেকেই আবার হয়রানির শিকার হয়ে হাল ছেড়ে দেয়। তাই কোন ব্যক্তি যদি
কৃষি ব্যাংক লোন পেতে আগ্রহী হয় এবং কৃষি ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায় সম্পর্কে
জানতে চায় তাহলে আজকের আর্টিকেলটি তার জন্য।
কৃষি ব্যাংকে লোন নেওয়ার উপায়
বাংলাদেশের হত দরিদ্র কৃষকদের কৃষি ব্যাংক লোন নেওয়ার নিয়ম অনেক সহজ। তবে লোন
নেওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই কিছু যোগ্যতা থাকতে হবে এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকতে
হবে। কৃষি ব্যাংকে শস্য খেতে লোন প্রদান করে থাকে। একজন কৃষক যদি এক টুকরো জমি
থাকে কিন্তু জমি চাষাবাদ করার জন্য মূলধন না থাকে সেই ক্ষেত্রে উক্ত কৃষক যদি
কৃষি ব্যাংকের শাখায় সঠিক তথ্য সংগ্রহ করে যোগাযোগ করে তাহলে সে লোন প্রাপ্তির
অন্তর্ভুক্ত হবে।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সাধারণত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কৃষকদের কৃষি ব্যাংক লোনের জন্য
অগ্রাধিকার দিয়ে রেখেছেন। আপনি যদি একজন কৃষক হন আপনার কিছু পরিমাণ জমি আছে এবং
আপনি কোন এক বিষয়ে সরকারি বা বেসরকারি অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ
করেছেন তাহলে আপনি সঠিক কাগজপত্র দাখিলের মাধ্যমে ঋণ প্রাপ্তির আওতায়
অন্তর্ভুক্ত হবেন।
আরো পড়ুনঃ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে লোন নেওয়ার নিয়ম
সে ক্ষেত্রে উক্ত জমির মালিক আপনার কে হতে হবে অর্থাৎ সেই সম্পত্তিতেই আপনার নামে
থাকতে হবে। যার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে লোন পাস করবে। আপনি যদি কৃষি
ব্যাংকের লোন পাওয়ার উপায় সম্পর্কে এবং অন্য তথ্য সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানেন
তাহলে কেবলমাত্র আপনি দিন পেতে পারেন।
কৃষি ব্যাংক লোনের প্রকারভেদ
লোন মূলত তিন ধরনের হয়ে থাকে নিম্নে এগুলো উল্লেখ করা হলো।
- স্বল্প মেয়াদের ঋণ
- মধ্যমেয়াদি ঋণ
- দীর্ঘমেয়াদি ঋণ
এই তিন ধরনের ঋণের মধ্যে সেরকম কোন পার্থক্য নেই। তবে ঋণ গুলোর মধ্যে ঋণ পরিশোধের
সময়কাল এর পার্থক্য রয়েছে। এই তিন ধরনের ঋণ বাদক কৃষি ব্যাংকের আন্ডারে আরো
কিছু ঋণ আছে। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক শুধু শস্য ক্ষেতের জন্য তার থেকে পাঁচটি
কাগজপত্র নিয়ে থাকে।
কৃষি ব্যাংকে লোন পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
কৃষি ব্যাংক থেকে লোন পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কয়েকটি ভাগে ভাগ করা
হয়েছে। ঋণের খাট সময়কাল এবং সুদের হার নিয়ে আলাদাভাবে নিম্নে বিশেষণ করা হলো।
অনুগ্রহ করে আপনার ঋণের খাদ নিজের নিন এবং সে অনুযায়ী বিস্তারিত পড়ুন।
- শস্য ঋণ পেতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
- শস্য ঋণের জন্য প্রথমে লাগবে আপনার ভোটার আইডি কার্ড এর ফটোকপি।
- দু কপি পাসপোর্ট সাইজের নতুন ছবি।
- আপনার এলাকার চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট।
- শুধুমাত্র শস্য খাটের জন্য কোন প্রকার দলিল প্রয়োজন হয় না।
মেয়াদি জনের ক্ষেত্রে যে সকল কাগজপত্র প্রয়োজন
ইতি মধ্যে আমরা জেনেছি কৃষি ব্যাংকের ঋণ তিন ভাগে ভাগ করা হয় এগুলো হচ্ছে স্বল্প
মেয়াদি ঋণ দীর্ঘ মেয়াদি ঋণ এবং স্বল্প মেয়াদী ঋণ। চলেন জেনে নেওয়া যাক এই ঋণ
গুলো নেওয়ার জন্য আপনার কি কি কাগজপত্র লাগবে।
- আপনার ২ কপি ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি।
- আপনার দু কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি দিতে হবে।
- ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের থেকে প্রাপ্ত সার্টিফিকেট অথবা নাগরিকত্ব সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে।
- আপনি যেই জমির উপরে লোন নিতে ইচ্ছুক সেই জমির খতিয়ান জমা দিতে হবে।
- জমির খাজনা জমা দিতে হবে অবশ্যই খাজনা পরিষদ থাকতে হবে।
- আপনার জমি কি যদি নিলামের মাধ্যমে হয়ে থাকে তাহলে খাজনার দাখিল সহ আগে দখলদারি সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে।
- আপনার উক্ত জমি পূর্বপুরুষের মধ্যে থেকে পেয়ে থাকেন তাহলে মূল খতিয়ান জমা দিতে হবে।
- আপনার জমিটি যদি ক্রয়-কৃত হয়ে থাকে তাহলে মূল দলিল খারিজ খতিয়ান ও মৌজা ম্যাপ এর ফটোকপি জমা দিতে হবে।
- অথবা আপনি যদি ইজারার মাধ্যমে পেয়ে থাকেন তাহলে খাজনার দাখিলাসহ দানপত্র জমা দিতে হবে।
আমরা উপরে কৃষি ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায় যোগ্যতা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সম্পর্কে
জেনেছি এবং তার সাথে ঋণের প্রকারভেদ সম্পর্কেও জেনেছি। এখন আমরা ঋণের বৈশিষ্ট্য
এবং সুদের হার সম্পর্কে আলাদাভাবে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব।
স্বল্প মেয়াদে ঋণের বৈশিষ্ট্য এবং সুদের হার
স্বল্প মেয়াদে ঋণের ক্ষেত্রে খাত সমূহ এর মধ্যে বেশিরভাগ হচ্ছে শস্য ক্ষেত আপনার
কোন জমি থাকে এবং ওই জমিতে ফসল চাষ করার জন্য অল্প কিছুদিন এর জন্য ঋণ প্রয়োজন।
যেমন এক বছর থেকে ১৮ মাস তাহলে আপনি শুধু কয়েকটি কাগজ জমা দিয়ে শস্য ঋণ নিতে
পারেন। এছাড়াও কৃষি ব্যাংক লোন এর আওতায় স্বল্প মেয়াদী ঋণের বিভাগে ভুট্টা ডাল
এবং শীতকালীন সবজি উৎপন্ন। মৎস্য চাষ, চিংড়ি চাষ, বোরো ধান, রুপা আমন ধান, আখ,
আলু, বাদাম, সরিষা, গম, তিল গ্রীষ্মকালীন সবজি, তুলা চাষ, আদা অথবা কচু চাষ।
কলা চাষ ইত্যাদি ফসল হয়ে থাকে।এ সকল ঋণ নিতে হলে আপনার তেমন কোন কাগজপত্র
প্রয়োজন পড়বে না। মাত্র চার থেকে পাঁচটা কাগজপত্র জমা দিলেই এ ঋণ দ্রুত কার্যকর
হয়। এমনকি এই ঋণ নিতে কোনরকম দলিল বা জামানত প্রয়োজন হয় না। তবে বলে রাখা ভালো
স্বল্পমেয়াদি এই ঋণ এক বছর থেকে ১৮ মাসের জন্য দেয়া হয়। স্বল্পমেয়াদি ঋণের
সকল খাতে সুদ দিতে হয় আট শতাংশ।
দীর্ঘ মিয়াদি ঋণের বৈশিষ্ট্য, ঋণের খাত এবং সুদের হার
দীর্ঘমেয়াদী ঋণের হাত গুলোর মধ্যে রয়েছে দুগ্ধ খামার, হাঁস মুরগির খামার, গবাদি
পশুর খামার, ফলের বাগান, কৃষি যন্ত্রপাতি উৎপাদন, চা বাগান, রাবার চাষ, অথবা
রাবার বাগান। কৃষি ব্যাংক লোন এর আওতায় দীর্ঘমেয়াদী ঋণের জন্য পাঁচ বছরের বেশি
সময় প্রদান করা হয়ে থাকে। তবে সময়কাল ঋণের খাত এর উপর কম বেশি হয়।
দীর্ঘমেয়াদি ঋণের জন্য ৯ শতাংশ সুদ দেওয়া লাগে। আগের মত দীর্ঘমেয়াদী ঋণে যেসব
খাদ শস্য খাদ সেগুলোর জন্য সুদ দিতে হবে ৮ শতাংশ।
কৃষি ব্যাংকে লোন পরিশোধের নিয়ম
উপরে উল্লেখিত আলোচনায় আপনারা জানতে পেরেছেন কৃষি ব্যাংকের লোন পাওয়ার উপায়
এখন আমরা কৃষি ব্যাংকের লোন পরিশোধের নিয়ম সম্পর্কে জানব। শস্য খ্যাতের জন্য
মজুরকৃত অর্থ জমি তে ফসল উৎপাদনের পরিপ্রেক্ষিতে যে ঋণ গ্রহণ করা হয় সে জমির
উৎপাদিত ফসল বিক্রি করে সময়মতো সুদসহ পরিশোধ করতে হয়। অন্যথায় সুদসহ পরিশোধ না
করিলে পাবল িক ডিমান্ড রিকভারি অ্যাক্ট ১৯১৩ এর আওতায় সার্টিফিকেট কেসের মাধ্যমে
ব্যাংক আপনার নিকট হতে সুদ পাওনা আদায় করার ব্যবস্থা করিবে।
কৃষি ব্যাংকের লোন পাওয়ার যোগ্যতা
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের লোন পাওয়ার উপায় সম্পর্কে জানার সাথে সাথে কৃষি
ব্যাংকের লোন পাওয়ার যেসব যোগ্যতা আছে সেগুলো জানাটাও অত্যন্ত জরুরী। বাংলাদেশ
কৃষি ব্যাংকের লোন পেতে হলে অবশ্যই কিছু যোগ্যতা থাকা লাগবে যেমনটা কম বেশি সব
ব্যাংকেই থাকে। আসুন এবার জানা যাক বাংলাদেশের কৃষি ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার জন্য
আপনার কি কি যোগ্যতা থাকতে হবে। কৃষি ব্যাংকের লোন পাওয়ার যোগ্যতা সম্পর্কে নিচে
পয়েন্ট আকারে তুলে ধরা হলো।
- সাধারণত ফসল উৎপাদন তিন থেকে চার মাস এর মধ্যে হয়ে থাকে ।হয়তো বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের লোন আপনাকে লোন গ্রহণের তারিখ হইতে লোন পরিষদের জন্য ছয় মাস সময় দিবে।
- আপনাকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে এবং আপনার বয়স ২১ বছরের বেশি হতে হবে।
- সঠিকভাবে লোনের টাকা ব্যবহার করার ক্ষমতা এবং পরিশোধ করার ক্ষমতাও থাকতে হবে অর্থাৎ নির্দিষ্ট পরিমাণ আয় আছে অথবা নমিনির ঋণ পরিশোধ করার ক্ষমতা আছে এরকম প্রমাণ দাখিল করতে হবে।
- যদি কারো বাড়ি ঘর না থাকে এবং আপনি পূর্বেই ঋণের জর্জরিত আসেন তাহলে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক আপনাকে লোন প্রদান করবে না।
- আপনাকে কে অবশ্যই একজন কৃষক হতে হবে। যদি কৃষক নাও হন অন্তত কৃষি কাজের সাথে সরাসরি জড়িত আছেন এমন প্রমাণ দাখিল করতে হবে।
- পূর্বে যদি আপনি কৃষি ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে থাকেন এবং তা পরিষদ না করে থাকেন তাহলে আপনি লোন পাওয়ার অযোগ্য বলে গণ্য হবেন।
আমার মতামত
ইতিমধ্যে আমরা কৃষি ব্যাংকের লোন পাওয়ার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছি আমরা
এখন সম্পূর্ণভাবে অবগত হয়েছি যে কিভাবে আমরা কৃষি ব্যাংক থেকে লোন নিতে পারি।
একটি কথা না বললেই না আমার এই তথ্যগুলো সম্পূর্ণ কৃষি ব্যাংকের ওয়েবসাইট থেকে
নেওয়া। কৃষি ব্যাংক তার নিয়মকানুন যখন তখন চেঞ্জ করতে পারেন এজন্য আপনি কৃষি
ব্যাংকের কোন শাখায় গিয়ে তাদের কোন কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে ব্যাংকের লোনের
কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ সোনালী ব্যাংকে একাউন্ট খোলার নিয়ম
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ জানাই যে আমারে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য। এরকম
আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানার জন্য আমার ওয়েবসাইটটি প্রতিদিন ভিজিট করুন। কৃষি
ব্যাংকের লোন পাওয়ার উপায় সম্পর্কে এই পোস্টে আপনার যদি কোন মন্তব্য থাকে তাহলে
আমাদের মন্তব্য বক্সে আপনার গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্যটি দাখিল করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url