গাছ পাকা আম চেনার উপায় - বিভিন্ন জাতের আম সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

গাছ পাকা আম চেনার অনেক ধরনের উপায় রয়েছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত লাভের কারণে নানা রকমের রাসায়নিক ব্যবহার করে সোমার আগেই আম পাকিয়ে বাজারে বিক্রি করে।
এই ভেজাল যুক্ত আমগুলো খেয়ে আমাদের অনেকেরই অনেক রকমের রোগব্যাধি হয়ে থাকে। এই জন্য আজকে আমি আপনাদের সঙ্গে গাছ পাকা আম চেনার অনেক রকমের উপায় এবং বিভিন্ন জাতের আম খেতে কি রকম এর সম্পর্কে আলোচনা করব।

গাছ পাকা আম চেনার কিছু উপায়

চলছে আমের মৌসুম। ইতিমধ্যে বাজারে উঠতে শুরু করেছে অনেক রকমের পাকা আম। তবে বাজারে গাছে পাকা আমের পাশাপাশি বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক দিয়ে পাকানো আম যা আমাদের স্বাস্থ্যর জন্য অনেক ক্ষতিকর। ভালো আম চিনতে কিছু কৌশল প্রয়োগ করতে হয় এগুলো হলোঃ

  • আম হাতে নিয়ে শক্ত মনে হলে বুঝবেন এটি রাসায়নিক দিয়ে পাকানো আম।
  • আমের গায়ে কালো ছোপ ছোপ দাগ থাকলে সতর্ক হয়ে যেতে হবে। রাসায়নিক দিয়ে আম পাকলে। আমের গায়ে কালো দাগ হয়ে যায়।
  • আম কিনলে পানিতে ডুবিয়ে রাখুন। যদি দেখেন ভাসছে তাহলে বুঝবেন রাসায়নিক দিয়ে পাকানো আম স্বাভাবিকভাবে পাকলে আম পানিতে ডুবে যেত
  • ফলের চেহারা হবে উজ্জ্বল ও অনেক আকর্ষণীয়। কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো আমের সব দিক টাই সমানভাবে পাকবে কিন্তু গাছ পাকা ফল এর সব দিক কখনোই সমানভাবে পাকে না। কোন দিকে একটু বেশি পাকবে আবার কোন দিকে একটু কম পাকবে।
  • রাসায়নিক দিয়ে পাকানো ফলের স্বাভাবিক পাকা ফলের মতো মিষ্টি গন্ধ থাকবে না।
  • প্রকৃতিকভাবে পাকা ফলের চামড়ার উপর এক ফোঁটা আয়োডিন দিলে তা গারো নীল অথবা কালো বর্ণের হয়ে যাবে। কিন্তু কেমিক্যাল দ্বারা পাকানো ফলে আয়োডিন রং অপরিবর্তিত থাকবে।
  • আম নাকের কাছে নিলে ভালো করে সুখে আম কিনুন। গাছ পাকা আম হলে অবশ্যই বোটার কাছে ঘ্রাণ থাকবে।
  • আম কেনা হলে কিছুক্ষণ রেখে দিন। এমন কোথায় রাখুন যেখানে বাতাস চলাচল করে না। গাছ পাকা আম হলে গন্ধ ছড়িয়ে যাবে চারপাশে। ঔষধ দেওয়া আমে এই মিষ্টি গন্ধ কখনোই ছড়াবে না।

রাসায়নিক দিয়ে পাকানো আম খেলে কি ক্ষতি হয়ে থাকে

আমরা সকলেই জানি যে রাসায়নিক দিয়ে পাঠানো আম খেলে আমাদের শরীরে অনেক রকমের রোগ ব্যাধি দেখা যায়। আমাদের দেশে অনেক অসাধু ব্যবসায়ী আছে যারা একটু বেশি লাভের জন্য রাসায়নিক দিয়ে আম পাকায়। আমরা এটি খেয়ে অনেকেই মৃত্যুর দিকে ধরে পড়ি। গাছ পাকা আম যদি আমরা সঠিকভাবে না চিনে থাকি তাহলে আমরা রাসায়নিক যুক্ত আম খেয়ে অনেক বিপদে পড়ি। 
এজন্য আমাদের সবার উচিত গাছ পাকা আম চেনা। কারবাইট প্রয়োগে ফল পাকা দেখায় কিন্তু গাছ পাকা ফলের মত মিষ্টি ও রসালো হয় না। বাণিজ্যিকগ্রেডের ক্যালসিয়াম কার্বাইডে আর্সেনিক ও ফসফরাস থাকতে পারে। এসব রাসায়নিক পদার্থ শরীরে প্রবেশ করে নানা ধরনের রোগ ব্যাধি এবং ক্ষতিসাধন করতে পারে। আমাদের শরীরে লিভার কিডনিসহ হতে পারে প্রাণঘাতী রোগ। এর জন্য আমরা সবাই রাসায়নিক দিয়ে পাকানো আম খাওয়া থেকে বিরত থাকবো। এবং সবাই চেষ্টা করব গাছ পাকা আম খাওয়ার ।

বাংলাদেশের সেরা আমের জাত

বাংলাদেশে উৎপাদিত আমের ২৫ শতাংশ আম্রপালী জাতের আম হয়ে থাকে। গত এক দশকে সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বেড়েছে এই জাতের আম চাষ। মাত্র ১ দশক আগেও ফজলি, হিমসাগর, ল্যাংড়া ও গোপাল ভোগ আনছিল বাংলাদেশের মানুষদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় আমের জাত। কিন্তু এখন সেই স্থান দখল করেছে আমরুপালি বা বাড়ি ম্যাংগো-৩ আমের জাত। 
বাংলাদেশের সেরা কিছু আমের জাত নিয়ে কথা বলব আর ফজলি আম সম্পর্কে কথা বলবো না এটাকখনোই হতে পারে না। উত্তর বঙ্গ মানেই ফুজিয়ামের স্বর্গ। সুনির্দিষ্ট করে বলতে গেলে ফুজি আমের চাষের জন্য রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ বেশ সুখ্যাতি আছে সারা দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে। বাংলাদেশের সেরা আমের জাতের মধ্যে আরেকটি বেশ জনপ্রিয় আম হচ্ছে ল্যাংড়া।
 
১৮ শতকে ভারতের দ্বারভাঙ্গা এক খরা ফুকুরের মাধ্যমে শুরু হয় এই আমের চাষ। কিন্তু ফকিরের নামটা আমের সাথে না জুললেও তার শারীরিক প্রতিবন্ধকতাটি এখনো মিশে আসে এই আমের সঙ্গে। ন্যাংড়া আমের আরেকটি নাম বারানসি। আমাদের বাংলাদেশে আরও বিভিন্ন রকমের জনপ্রিয় আম রয়েছে এগুলোর মধ্যে হচ্ছে ক্ষীরশাপাতি বা হিমসাগর, হাড়িভাঙ্গা, গোপালভোগ, লক্ষণ ভোগ, আশ্বিনা, রানী পছন্দ, মোহনভোগ ইত্যাদি

বাংলাদেশের সব থেকে মিষ্টি আম কোনটি

আমাদের বাংলাদেশের ফলের রাজা হচ্ছে আম। আপনাদের সবারই মনে এই প্রশ্নটি থেকেই যায় যে বাংলাদেশের সব থেকে মিষ্টি আম কোনটি। আমরা নিঃসন্দেহে বলতে পারি যে বাংলাদেশের সব থেকে মিষ্টি এবং সুস্বাদু আম হচ্ছে আম রুপালি। পাঁচটি উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে। 

বর্তমানে বাংলাদেশের উৎপাদিত আমের প্রায় ৩০% আম হচ্ছে আম্রপালি। আপনাদের সবার কি রকমেরা লাগে এই আমরুপালি আম খেতে আমাকে অবশ্যই আপনাদের সুন্দর একটি মন্তব্যের মাধ্যমে জানাবেন।

আম উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশ কত নাম্বার অবস্থানে আছে

বাংলাদেশে আয়তনের দিক থেকে বিশ্বের ৯৮ তম দেশ। তবে আম উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান হচ্ছে শীর্ষ নবম অবস্থান। প্রতিবছর বাংলাদেশে ওয়ান পয়েন্ট ফাইভ মিলিয়নটন উৎপাদন হয়ে থাকে। আপনারা জানেন অবাক হবেন যে এই উৎপাদিত আমের প্রায় ৫০ শতাংশ আম আমাদের রাজশাহী বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং এর আশে পাশের উপজেলা গুলো থেকে গিয়ে থাকে। বাংলাদেশের প্রতিবছরই আম উৎপাদন বাড়ছে। 
তাই দেশের মানুষের পুষ্টির অন্যতম উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে আম। আমাদের দেশে গাছ পাকা আম সব থেকে বেশি সুস্বাদু হয়ে থাকে। বাংলাদেশের ২০১৯-২০ অর্থবছরে আম উৎপাদিত হয়েছে ১২ লাখ ২২০০০ টন। দেশে ২ লাখ ৩৫ হাজার একক জমিতে আমবাগান রয়েছে। প্রতিটি গাছে গড়ে ৭৭ কেজি করে আম উৎপাদিত হয়।

বর্তমানে আম উৎপাদনে শীর্ষ জেলা কোনটি

বর্তমানে আম উৎপাদনে শীর্ষ জেলা হচ্ছে নওগাঁ জেলা। আম চাষে আয়তনের দিক থেকে নওগাঁ দ্বিতীয় হলেও উৎপাদনের নওগাঁ জেলা প্রথম স্থান দখল করেছে। কিছুদিন আগে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক সবাই আমপাড়ার সময় নির্ধারিত অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়। আম উৎপাদনে বাংলাদেশের দ্বিতীয় যেই জেলাটি আছে সেটি হচ্ছে চাপাই নবাবগঞ্জ জেলা।

আগে এটি বাংলাদেশের প্রথম আম উৎপাদনকারী জেলা ছিল। এখন নওগাঁ জেলা এটিকে পিছনে ফেলে সামনের দিকে এগিয়ে গিয়েছে। চাপাইনবাবগঞ্জ জেলা আস্তে আস্তে তাদের আম উৎপাদনের জায়গাটি হারিয়ে ফেলতেছে। আমাদের নওগাঁ জেলা গাছ পাকা আমের জন্য বেশ বিখ্যাত। আমাদের এই নওগাঁ জেলাতে সব রকমের আম পাওয়া যায়। যেগুলো বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে এবং বিদেশে রপ্তানি করে বাংলাদেশ বিপুল পরিমাণের অর্থ পেয়ে থাকে।

আমার মতামত

আম খেতে ভালবাসি না এরকম লোক আমাদের বাংলাদেশে খুবই কম রয়েছে। আমাদের অনেকের বাসায় আমের গাছ নেই। এজন্য আমরা গাছ পাকা আম খেতে পারি না। আমরা অনেকেই শহরে এবং দেশের বাইরে থাকি যারা আমরা বিভিন্ন রাসায়নিক দিয়ে পাকানো আম খেয়ে অনেক রোগব্যাধির মুখে পড়ি। 
এজন্য আমাদের সবার উচিত গাছ পাকা আম নিজে চেনা এবং অন্যকে চেনা সুযোগ করে দেওয়া। প্রিয় পাঠক আমার পোস্টটি যদি আপনাদের একটু হলেও সহযোগিতা করে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু এবং ফ্যামিলির মানুষদের সঙ্গে শেয়ার করুন যাতে করে তারাও ফরমালিন যুক্ত আম খেয়ে বিভিন্ন রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত না হয়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url