বেল খেলে কি হয় এবং বেলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

বেল মানুষের পেট পরিষ্কার করতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে। এবং এটি বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমাণিত। তিন মাস নিয়মিত বেল খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য ব্যধি থেকে মুক্তি পাওয়া যায় খুব সহজেই।
বেল খেলে কি হয় এবং বেলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
এই রোগের সমস্যা সমাধানে যেখানে ব্যর্থ হয়ে যায় সেখানে একমাত্র নিয়মিত বেল খেলেই মুক্তি পাওয়া সম্ভব কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে।

বেল খাওয়ার উপকারিতা

বেল খেলে হজম শক্তি বাড়ে এবং তা বলবর্ধক। বেল মানুষের হজম শক্তি প্রক্রিয়াকে উন্নত করে। বেলের পাতার রস মধুর সাথে মিশিয়ে পান করলে চোখের পানি ও জ্বালা উপশম হয়। পাতা রস মধু ও গোলমরিচের গুড়া মিশিয়ে পান করলে জন্ডিস রোগ নিরাময় হয়। শিশুর স্মরণ শক্তি বাড়ানোর জন্য তেল উপকারী। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য পের একটি ওষুধ হিসেবে পরিচিত।

মানুষের শরীর সতেজ রাখার জন্য বেল অনেক জনপ্রিয়। কারণ একটি বেলে আছে প্রোটিন যা মানবদেহের এনার্জি বৃদ্ধি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মানুষের লিভার ভালো রাখার মূল ফলমূল হিসেবে খেতে পারেন বেল। কারণ বেলে আছে বিটা ক্যারোটিন যা লেবার ভালো রাখতে সহায়তা করে। বেল মানুষের কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা থেকে দূরে রাখ।

বেলে আছে অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল উৎপাদন যা যক্ষা রোগ সারাতে সহায়তা করে। মানুষের চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি এবং প্রখর করতে বেলের উপকারিতা অনেক। ভিটামিন এ যা মানুষের চোখের জন্য অত্যন্ত উপকারী। বেল ব্লাড প্রেসার কমাতে সহায়তা করে। সঠিকভাবে নিয়মিত বেলের শরবতং পান করলে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব। মানবদেহে কিডনি সুস্থ রাখতে বেল অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

কারণ বেড়ে থাকা উপকার উপাদান গুলো কিডনিকে ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করে থাকে। ক্যান্সার রোগ থেকে মুক্তি পেতে চাইলে অবশ্যই বেল খেতে হবে। কারণ বেলে রয়েছে এন্টিপ্রলেফিরেটিভ এবং এন্টিমুটাজেন উপাদান গুলো। বেল তক ভালো রাখতে সহায়তা করে। বেলে আছে অনেক খাদ্য আশ জাতকের জন্য খুবই উপকারী।

বেল খাওয়ার উপকারিতা

সাধারণত কোন জিনিসের অতিরিক্ত কিছুই শরীরের জন্য ভালো নয়। প্রয়োজন বা নিয়মের বেশি সকল কিছু দেহের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনে না। ঠিক তেমনি বেল যেমন মানুষকে নানা রকম উপকারিতা প্রদান করতে পারে তেমনি ক্ষতিও করে। বেল সাধারণত মিষ্টি হয়ে থাকে। কিন্তু অতিরিক্ত পরিমাণ যদি কেউ এই মিষ্টি বেল খেয়ে ফেলে তাহলে তা অনেক ক্ষতি হতে পারে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য।
অধিক মাত্রায় যদি বেল খেলে বিভিন্ন সময় তা পেটের সমস্যা তৈরি করতে পারে। অতিরিক্ত পরিমাণে যদি পাকা বেল খাওয়া হয় তাহলে তার পেটে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করতে পারে। বেল খাওয়ার মাত্রা যদি খুব বেশি হয়ে যায় তাহলে বিভিন্ন সময় টা পাতলা পায়খানা সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। বিভিন্ন সময় দেখা যায় অতিরিক্ত পরিমাণে বেল খেলে যৌন শক্তি খুব দ্রুত কমে যায়। দীর্ঘদিন সময় ধরে পাকা বেল খেলে অন্তের ছিদ্র হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে কাছা বেল খাওয়া হলে এই সমস্যা হয় না।

বেল পাতার উপকারিতা

বেলপাতা সাধারণতভেজন উদ্ভিদ হিসেবে আমাদের কাছে পরিচিত। কোন ধরনের ভাবা চিরে গেলে আমরা বেলপাতা কে খসে সেখান থেকে রস বের করে সে ক্ষত স্থানে লাগিয়ে দিলে খুব সহজেই ক্ষত ছেড়ে যায়। সর্দি কাশি বা জ্বর এর ক্ষেত্রে বেলপাতা দারুন ভালোভাবে কাজ করে। যাদের পেটে কোষ্ঠকাঠিন্য মত সমস্যা এবং প্লীহা জাতীয় রোগে ভুগছেন তারা প্রতিদিন এক টেবিল চামচ বেলের রস খালি পেটে খেলতে পারে এতে করে আপনার পেটের সমস্যা দূর হয়ে যাবে।

বেল পাতা যৌবনের উদ্দীপনা কমাতে দারুণভাবে কাজ করে। নিয়মিতভাবে বেলপাতার রস সেবন করার মধ্য দিয়ে যৌবনের উদ্দীপনা অনেক কমিয়ে ফেলা সম্ভব হয়। কোথাও দীর্ঘক্ষণ কাজ করতে গিয়ে শরীরে বিভিন্ন জয়েন্ট ব্যাথা হতে পারে আমরা যদি রাতের বেলায় এই বেলের পাতা গরম করে সেই ব্যথার স্থানে শেখ দিতে পারি তাহলে আমাদের ব্যথা অনেক সেরে যাবে। যাদের মাথায় টাক রয়েছে বা অল্প বয়সে চুল ঝরে গেছে বা জন্মগতভাবে মাথায় চুল নেই তারা বেলপাতা রস নিয়মিত মাথায় লাগালে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।

যাদের শরীর থেকে দুর্গন্ধ বের হয় তারা বেলপাতা রসের ব্যবহার মধ্যে দিয়ে এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে পারেন। গোসলের নিয়মিত পানিতে সেদ্ধ করা বেলের পাতা কিছু পরিমাণ সেই গোসলের পানির সাথে মিশ্রিত করে গোসল করতে হবে তাহলে শরীর থেকে ঘামের দুর্গন্ধ বের হয় প্রবণতা কমে যায়। শরীরে বিভিন্ন ধরনের এলার্জি জনিত সমস্যা থাকলে বেল পাতার রস ব্যবহার করে এসেই সমস্যা থেকে নিস্তার পেতে পারি।

খালি পেটে বেল খাওয়ার উপকারিতা

নিয়মিত খালি পেটে বেল খেলে শরীরে উপকারী ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এবং মিনারেলের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকে। যা খারাপ কলেস্টেরলের পরিমাণ কমানোর পাশাপাশি ব্লাড প্রেসার কে নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফলে হার্টের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা কমে।

প্রতিদিন সকাল সাতটা থেকে এগারোটা পর্যন্ত আমাদের শরীর তার ভেতরে থাকা টক্সিক উৎপাদন গুলো বের করে দেওয়ার কাজ করে। তাই এ সময়ের ভেতরে অন্তত এক বাটি ফল খেতে পারলে শরীরের বিষাক্ত উপাদান গুলো বেশি মাত্রায় বের হয়ে যায়। আর এ কারণে নানা রকম অসুখের আক্রান্ত হওয়ার ভয় কমে।

বেল খেলে কি গ্যাস হয়

বেলে ভিটামিন এ চোখের পুষ্টি যোগায় ও চোখের সুরক্ষা সাহায্য করে। মলদ্বারের রোগ পাইলস অ্যানাল ফিস্টুলা, হেমোরয়েড রোগীরা নিয়মিত বেলে শরবত খেলে ওষুধের মত কাজ করে। বেলে ন্যাচারাল ফাইবার বা আঁশের পরিমাণ অনেক বেশি তাই এটি পেটে গ্যাস এসিডিটি সৃষ্টি হতে দেয় না এবং এতে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।

বেলের পুষ্টি গুনাগুন

বেল একটি পুষ্টিকর ও উপকারী ফল। বেলের পুষ্টিগুণ অন্যান্য ফলের চেয়ে অত্যন্ত বেশি। কাঁচা কিংবা পাকা উভয় ফলটি খাওয়া যায়। বেলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এ ক্যালসিয়াম ফসফরাস ও পটাশিয়ামের মত মূল্যবান পুষ্টি উপাদান রয়েছে।
প্রতি ১০০ গ্রাম বেলের শাঁসে পানির পরিমাণ ৫৪.৯৬-৬১.৫ গ্রাম, প্রোটিন ১.৮-২.৬২ গ্রাম, স্নেহ পদার্থ ০.২-০.৩৯ গ্রাম, শর্করা ২৮.১১- ৩১.৮ গ্রাম, ক্যারোটিন ৫৫ মিলি গ্রাম, থায়ামিন ০.১৩ মিলিগ্রাম, রিবোফ্লেবীন ১.১৯ মিলিগ্রাম, এসকরবিক এসিড ৮-৬০ মিলিগ্রাম, নিয়াসিন ১.১ মিলিগ্রাম ও টারটারিক এসিড ২.১১ মিলিগ্রাম।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url