ডায়াবেটিস রোগীদের কি খাওয়া যাবে এবং কি খাওয়া যাবেনা তা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

ডায়াবেটিস হলে যে আপনাকে নির্দিষ্ট কিছু খাবার খাওয়া একেবারে ছেড়ে দিতে হবে তা নয়। আপনি বিভিন্ন রকমের খাবার খেতে পারেন তবে কিছু খাবার অবশ্যই পরিমাণে খেতে হবে।
ডায়াবেটিস রোগীদের কি খাওয়া যাবে  এবং কি খাওয়া যাবেনা তা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
ডায়াবেটিস হলে প্রতিদিন একই ধরনের খাবার না খেয়ে নানান রকমের ফলমূল শাকসবজি ও কিছু শ্বেতসার জাতীয় খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। চিনি লবণ ও চর্বি জাতীয় খাবারের পরিমাণ একেবারে কমিয়ে দিতে হবে। প্রতিদিন সকালে নাস্তা দুপুরে ও রাতে খাবার সময় মতো খেতে হবে। কোন বেলার খাবার যেন বাদ না পরে।

ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা

ডায়াবেটিসের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো রোগী কি খাবেন কি খাবেন না এ বিষয় নিয়ে চিন্তায় থাকেন। রোগীর সেই সমস্ত খাবার না খাওয়াই উচিত যেগুলো রক্তের সুগারে মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। অনিয়ন্ত্রিত ব্লাড সুগার থেকে চোখ স্নায়ু এবং হার্টের সমস্যা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা থাকে। এবার জেনে নেওয়া যাক ডায়াবেটিস রোগীর সকাল বিকাল ও রাতের খাদ্য তালিকা।

ডায়াবেটিস রোগীর সকালের খাবার সকাল ৭ থেকে ৮ টার মধ্যে সকালের নাস্তা করতে হবে। দেরি হলে সকাল ৯ টার মধ্যে নাস্তা খেতে হবে।সকালের খাবারে রুটি চিড়া খই মুড়ি ওটস খেতে পারেন আপনার পছন্দ মত। আপনি এটিতে ডিম এবং সবজির যোগ করতে পারেন। ডায়াবেটিস রোগীর মধ্য সকালের খাবার সকাল ১০ টা থেকে ১১ টা মধ্যে আপনার পছন্দের ফল খেতে পারেন।

মিষ্টি ফল খেতে চাইলে ১ থেকে ২ কাপ খান। ডায়াবেটিস রোগের দুপুরের খাবার দুপুর ১টা থেকে ২ টার মধ্যে আপনার পরিমাণ মতো ভাত মাছ মুরগির মাংস শাক-সবজি সালাত ও লেবু ইত্যাদি খেতে পারেন। ডায়াবেটিস রোগীর বিকেলের নাস্তা বিকেলে নাস্তায় সুপ ছোলার চিনি ছাড়া বিস্কুট মিষ্টি ছাড়া পিঠা বাদাম মুড়ি চিনি ছাড়া রং ছাড়া ইত্যাদি খেতে পারেন।

ডায়াবেটিস রোগীর রাতের খাবার রাত ৮ঃ৩০ থেকে ৯ঃ৩০ তা টার পর্যন্ত আপনি আপনার পছন্দ এবং পরিমাণ অনুযায়ী রুটি বা ভাত বা ওটস খেতে পারেন। সাথে মাছ মুরগির মাংস সবজি ছাড়া লেবু ইত্যাদি খাবার খেতে পারেন। ডায়াবেটিস রোগী সব সবার আগে খাবার রাতে ঘুমানোর এক ঘন্টা আগে এক কাপ দুধ খাবেন। দুধের সমস্যা হলে দই ছানা পনির ইত্যাদি পরিমাণ মতো খেতে পারেন।

ডায়াবেটিস হলে কি খাওয়া যাবেনা

ডায়াবেটিস ধরা পড়লে প্রথমে যা করা দরকার তা হলো সাদা চিনিযুক্ত সব খাবার বর্জন করা। চিনি বা শর্করা অন্যান্য খাবারও আছে তাই সরাসরি চিনি বাদ দিলে ক্ষতি নেই। শর্করা খাবার হলো ভাত রুটি নুডুলস ইত্যাদি। এইসব সীমিত পরিমানে খেতে হবে এবং সাদা চাল আটা বা ময়দার পরিবর্তে লালসাল ও আটা খাওয়া ভালো।
ডায়াবেটিস রোগীদের মাখন ঘি মিষ্টি সব রকমের মিষ্টি সংযুক্ত খাবার যেমন চিনি মধু আইসক্রিম কেক পেস্টি ফলের রস নরম পানীয় অ্যালকোহল স্বাস্থ্যকর পানীয় তেলে ভাজা কচুরি চপ কাটলেট থেকে দূরে থাকাই ভালো। ২০১২ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে সাদা চালের খাবার খেলে প্রতিদিনই ঝুঁকির মাত্রা ১১ শতাংশ হারে বেড়ে যায়। কারণ এই স্যার প্রক্রিয়া চাঁদ করে সাদা করা হয়। তাছাড়া এই খাবার চিনি মাত্র বাড়িয়ে দিতে পারে। হলে বেশি পরিমাণে আলু খাওয়া যাবে না।

ডায়াবেটিস রোগীরা যে ছয়টি ফল খাবেন না

ফল স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে কিছু কিছু ফল মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে। এমন কিছু ফল আছে যেগুলো ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তের শর্করা মাত্রা অত্যাধিক পরিমাণে বাড়িয়ে দেয়। ডায়াবেটিস রোগীদের আম আঙ্গুর আনারস তরমুজ কলা সবেদা এই ছয়টি বল খাওয়া যাবেনা। আমেও কিন্তু চিনি পরিমাণ উচ্চ থাকে। ১০০ গ্রাম আযে প্রায় ১৪ গ্রাম চিনি থাকে। যা রক্তের শর্করা ভারসাম্যকে আরো খারাপ করতে পারে।

তাই ডায়াবেটিস রোগীদের এই ফল এড়িয়ে চলাই ভালো। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে আঙ্গুর। সুস্বাদু ফলটিতে ফাইবার ভিটামিন এবং অন্যান্য পুষ্টিকর উপাদান থাকে। তবে এতে শর্করা পরিমাণও বেশ ভালোই থাকে। ৮৫ গ্রাম আঙ্গুরে প্রায় ১৫ গ্রাম পর্যন্ত কার্বোহাইড্রেট থাকতে পারে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের এড়িয়ে চলাই ভালো। সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল আনারস। আনারসের চিনি পরিমাণ উচ্চ থাকে।
ডায়াবেটিস রোগীদের কি খাওয়া যাবে
ডায়াবেটিস রোগী অতিরিক্ত আনারস খেলে তা ব্লাড সুগার লেভেলের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীদের আনারস বেশি না খাওয়াই ভালো। পুষ্টিগুণে ভরা একটি ফল তরমুজ। এতে ফাইবার এবং ক্যালরি কম থাকে। হাফ কাপ তরমুজে প্রায় ৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট থাকতে পারে। তাই তরমুজ ডায়বেটিস রোগীদের বেশি না খাওয়াই ভালো।কলা ফলটি পুষ্টিগুনে সমৃদ্ধ। কলাতে কার্বোহাইড্রেট বেশি থাকে। কার কার্বোহাইড্রেট রক্তের শর্করা মাথা বাড়িয়ে দেয়।

তাই ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে এই ফলটি খুব একটা উপকারী না। তবে মাঝেমধ্যে এক বা আধাটা কলা খাওয়া যেতে পারে। বাদামি রঙের ফল এবং দানাদার সাতযুগ তো সবেদা প্রাকৃতিক মিষ্টিতে ভরপুর। প্রতি ১০০ গ্রাম সবেদায় প্রায় সাত গ্রাম শর্করা থাকতে পারে। এতে কার্বোহাইড্রেট এবং শর্করা ও পরিমাণ উচ্চ থাকতে পারে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি ক্ষতিকারক হতে পারে।

কোন ফল খেলে ডায়াবেটিস কমে

নিয়মিত আপেল নাশপাতি ব্লুবেরি খেলে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমে। আরো কিছু রঙিন ফল ডায়াবেটিস প্রতিরোধে উপকারী তবে সবার উপরে ব্লুবেরি ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ২৬ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে পারে। আরো আছে যেমন অ্যাভোকেডো পেঁপে বেরি জাতীয় ফল কামরাঙ্গা কমলা ইত্যাদি। ফলের পাশাপাশি আপনারা ফলের রস করেও খেতে পারেন।গবেষক বোন্ডনো জানিয়েছেন ভালোের রস রক্তে শর্করা পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। তিনি আরো জানিয়েছেন একটি স্বাস্থ্যকর ডায়েটের মধ্যে আপেল কমলা কলা রাখা অত্যন্ত প্রয়োজন।

দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায়

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের সুষম খাবার খাওয়া জরুরী। অপ প্রক্রিয়াজাত খাবারের দিকে মনোযোগ দেওয়ার পাশাপাশি কম পরিশোধিত শর্করা ও কার্বোহাইড্রেইট ধরনের শস্য গ্রহণে সচেতন থাকতে হবে। নানান রকম ফল সবজি শস্য চরবিহীন মাংস এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি খাওয়া জরুরী। সেই সাথে প্রক্রিয়াজাত খাবার মিষ্টি পানীয় ও উচ্চ চর্বি সমৃদ্ধ খাবার এড়িয়ে চলা উপকারী।
এছাড়াও খাবারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ রক্তের শর্করা মাথা নিয়ন্ত্রণের ভূমিকা রাখে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিয়মিত শরীরচর্চা করা উপকারী। এতে ইন্সুলিনের সংবেদনশীলতা নিয়ন্ত্রণ থাকে রক্তের শর্করা মাত্রা কমে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। সপ্তায়ে ১৫০ মিনিট মাঝারি অ্যারোবিক ব্যায়াম যেমন হাটা সাঁতার কাটা বার সাইকেল চালানো ইত্যাদি। এছাড়াও শক্তি বর্ধক ব্যায়াম থেকে শুরু করে পেশী গঠনমূলক ব্যায়াম সার্বিক সুস্থতার বজায় রাখে। নিয়মিত ব্যায়াম করলে ডায়াবেটিস অনেকটাই কম থাকে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url