পেয়ারার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
পেয়ারা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পেয়ারাতে থাকা
পটাশিয়াম যার রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রেখে হৃদরোগের
সম্ভাবনাও কমায়। ঠান্ডা জনিত সমস্যা দূর করে যেমন শ্বাসকষ্ট ঠান্ডা লাগা সর্দি-
কাশি প্রতিরোধ গড়ে তোলে পেয়ারা।
পেয়ারার উপকারিতা
রোগ প্রতিরোধে পেয়ারার অনেক গুণ রয়েছে। পেয়ারার ভিজে ওমেগা ৩ ও ওমেগা ৬
পলিআন-সেচুরেটেড ফ্যাটি এসিড ও আঁশ বিদ্যমান। পেয়ারার পাতার রস ক্যান্সার
প্রতিরোধী এবং আক্রমণ প্রদাহ ব্যথা জ্বর বহুমূত্র আমাশয় প্রভৃতির রগে ব্যবহৃত
হয়ে থাকে। পেয়ারাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে।
যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং শরীরের যে কোন রকম ইনফেকশন হওয়া থেকে
বাঁচায়। পেয়ারা পেটের সমস্যা দূর করে খাবারের রুচি আনে। কোষ্ঠকাঠিন্য কমায় হজম
শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে পেয়ারা। পেয়ারা একটি ফাইবার জাতীয় ফল আর তাই এটি
খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। কারো ঠিকমতো পায়খানা না হলে পেয়ারা ছেলেই করতে
পারবেন আপনার সমস্যার সমাধান। পেয়ারা দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়। ভিটামিন এ চোখের জন্য
উপকারী।
পেড়াতে থাকা ভিটামিন এ কর্নিয়াকে সুস্থ রাখে। পেয়ারায় থাকা প্রচুর পরিমাণ
ভিটামিন এ চোখে জ্যোতি বাড়ায়। পেয়ারা টক ও চুলে পরিচর্যা করে। পেয়ারায়
প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে চুল ভালো রাখতে আর সুন্দর করতে সাহায্য করে। পেয়ারা
হার্টকে সুস্থ রাখে। পেয়ারা রক্ তেকোলেস্টরলের মাত্রা কমায় যার ফলে হার্টের
অসুখ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। পেয়ারা মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালনে সহায়তা
করে।
পেয়ারাতে পাওয়া যায় ভিটামিন বি৩ এবং ভিটামিন বি৬ যা কিনা ব্রেনের রক্ত
সঞ্চালনকে ভালো রাখতে সাহায্য করে। পেয়ারা ওজন কমাতে সাহায্য করে। পেড়াতে
গ্লুকোজের পরিমাণ কম থাকে আর তাই ওজন কমাতে এটি বেশ ভালো একটি প্রতিষেধক। পেয়ারা
বয়সের ছাপ কমায়। পেয়ারার ভিটামিন বি ৬ ও পিরিয়ডক্সিন মস্তিষ্কের নার্ভের
কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। বিশেষজ্ঞদের মতে শিশুদের বুদ্ধি বিকাশে পেয়ারার
সবচাইতে বেশি কার্যকরী।
পেয়ারার অপকারিতা
পেয়ারার উপকারিতার পাশাপাশি অপকারিতাও রয়েছে। তাই আমাদের অবশ্যই অপকারিতা বা
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া জানা প্রয়োজন। পেয়ারা বিভিন্ন কারণে শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব
ফেলতে পারে। বেড়াতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে। তাই এটি অতিরিক্ত গর্ভবতী
মায়েদের জন্য পেয়ারা অতিরিক্ত খাওয়া যাবেনা। এতে অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
আরো পড়ুনঃ যে পাঁচ খাবার নিয়ন্ত্রণে রাখবে ডায়াবেটিস
বেড়াতে এমন কিছু যৌগ রয়েছে তা অতিরিক্ত গ্রহণে নানা ধরনের রোগ সৃষ্টি হতে পারে।
অতিরিক্ত পেয়ারা খেলে পেটের রোগ হতে পারে। পেয়ারা খাওয়ার কারণে পেট ফুলে যেতে
পারে এবং গ্যাস হতে পারে। পেয়ারা রক্তে শর্করাকে কমিয়ে ফেলে তাই ডায়েবেটিক
রোগীদের বেশি পেয়ারা না খাওয়াই ভালো। অনেক হালে এলার্জি থাকে। তাই পেয়ারা
খেলেও এলার্জি বা সম্ভাবনা রয়েছে।
তাই আপনাদের পেয়ারাতে এলার্জির সমস্যা থাকলে না খাওয়াই সবচেয়ে ভালো হবে। খালি
পেটে বেশি পেয়ারা খেলে গ্যাস্টিক হতে পারে। যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রয়েছে
তাদের পেয়ারা খাওয়ার ফলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বেড়ে দিতে পারে। পেড়াতে প্রচুর
পরিমাণে বিদজ রয়েছে যা হজম করতে সমস্যা হয়। তাই বেশি পেয়ারা খেলে বদহজম
ডায়রিয়া পেট ব্যাথা ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে।
পেয়ারার পুষ্টিগুণ
একটি পেয়ারাতে রয়েছে চারটি আপেল ও চারটি কমলালেবুর সমান পুষ্টিগুণ। পেয়ারাতে
আছে প্রচুর পরিমাণে পানি খাইবার ভিটামিন এ বি কে পটাশিয়াম খনিজ পদার্থ ও
প্রোটিন। পেয়ারা ভিটামিন সি এর ভালো উৎস। এতে ২১১ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি পাওয়া
যায়। প্রতি ১০০ গ্রাম পেয়ারায় ৭৬ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি,তি ১ দশমিক ৪ গ্রাম
প্রোটিন, ১ দশমিক ১ গ্রাম স্নেহ ও ১৫ দশমিক ২ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট পাওয়া যায়।
পেয়ারা নানা রকম খনির উৎপাদনে ভরপুর।
প্রতি ১০০ গ্রাম পেয়ারায় শূন্য দশমিক ৬ গ্রাম মিনারেল,শূন্য দশমিক শূন্য ৩
মিলিগ্রাম থায়ামিন,শূন্য দশমিক শূন্য ৩ রিবোফ্লেভিন ১ দশমিক ৪ মিলিগ্রাম আয়রন,
২৮ মিলিগ্রাম ফসফরাস ও ২০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়।
চুলের জন্য পেয়ারা পাতার উপকারিতা
চুলের জন্য পেয়ারা পাতা খুব উপকারী একটি পাতা। চুল উঠে যাওয়ার সমস্যায় ভুগছেন
তাদের প্রতিনিয়ত এ পেয়ারা পাতা যদি ব্যবহার করা যায় তবে চুল উঠা বন্ধ হবে। এবং
নতুন চুল গজাতে সাহায্য করবে। পেয়ারা পাতা চুল লম্বা করতে বেশ সাহায্য করে।
পেয়ারা ফলের মত পাতাও ভিটামিন বি এবং সি রয়েছে। যা চুলের বৃদ্ধির জন্য
প্রয়োজনীয় কোলাজেন বাড়াতে সাহায্য করে। ভিটামিন সি চুলে বৃদ্ধিতে সহায়তা করে
কোলাজেন উন্নত করে।
পেয়ারা পাতা হল ভিটামিন সি এর মত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং কোয়ারসেটিনের মতো
ফ্ল্যাভোনয়েডের একটি পাওয়ার হাউস যা আমাদের স্বাস্থ্য এবং সৌন্দর্যের জন্য
বিভিন্ন উপকার নিয়ে আসে। গবেষকরা দাবি করেছেন অবশ্যই পেয়ারা পাতা মাথার চুল
পড়া রোধে সহায়তা করে। কেননা এই পাতা ব্যবহারের ফলে চুলের সংযুক্তিস্থল অর্থাৎ
গ্রন্থিকোষ এবং চুলের গোরাকে শক্ত করে তুলে।
প্রতিদিন পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত পেয়ারা খেলে রক্তচাপ ও
রক্তে লিপিড কমে আসে। পেড়াতে থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত
পেয়ারা খেলে ঠান্ডা জনিত সমস্যা দূর করে শ্বাসকষ্ট ঠান্ডা লাগা সর্দি কাশিতে
প্রতিরোধ করে তোলে পেয়ারা। স্ট্রেস দূর করতে দারুণ কাজ করে পেয়ারা।
আরো পড়ুনঃ আনারস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
যারা ওজন কমাতে চান তাদের জন্য পেয়ারা খুব কার্যকরী একটি ফল তাই প্রতিদিন নিয়ম
করে পেয়ারা খাবেন। কারণ এটি প্রমাণ আকারে পেয়ারার মাত্রা ৬৪ ক্যালোরি থাকে আর
তা হজম করতে খরচ হয় তার চেয়ে বেশি। নিয়মিত পেয়ারা খেলে ত্বক ও চোখের
স্বাস্থ্য ভালো রাখে। আমাদের মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য রক্ষায় পেয়ারার অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। নিয়মিত পেয়ারা চিবিয়ে খেলে দাদ ও মাড়ির স্বাস্থ্য
খুব ভালো থাকে। অনেকেই বলে থাকেন পেয়ারার পাতা চিবিয়ে খেলে দাঁতের ব্যথা কমে
যায়।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url