কালোজিরার উপকারিতা এবং কালোজিরার খাওয়ার নিয়ম

ইসলাম ধর্মে বলা হয়েছে কালোজিরা মৃত্যু ছাড়া সকল রোগের মহা ওষুধ। সাধারণত কালোজিরা নামে পরিচিত হলেও কালোজিরার আরো কিছু নাম রয়েছে যেমন নিজেলা, ফিনেল ফ্লাওয়ার, হাব্বাটুসউডা, কাল কেওড়া ও কালঞ্জি ইত্যাদি।
কালোজিরার উপকারিতা এবং কালোজিরার খাওয়ার নিয়ম
কালোজিরার বৈজ্ঞানিক nigella sativa যে নামে ডাকা হোকনা কেন এই কালো বীজের স্বাস্থ্য উপকারিতা অপরিসীম। ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া নিধন থেকে শুরু করে শরীরে কোষ ও কলার বৃদ্ধিতে সহায়তা করে কালোজিরা। শুধুমাত্র স্বার্থের জন্যই না কালোজিরা চুল ও ত্বকের জন্য অনেক উপকারী। প্রত্যেকের রান্নাঘরে কালোজিরা থাকে চা খাবার কে সুবাসিত করে।

কালোজিরার উপকারিতা

কালোজিরায় থাকা বুঝছো এন্টি অক্সিডেন্ট উপাদান বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করতে পারে। ক্যান্সারে ঝুঁকি কমায় কালোজিরা। বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া সংক্রমনের বিরুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে কালোজিরা। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে কালোজিরা খারাপ কোলেস্টেরল বা এলডিএল কমাতে সাহায্য করে। কালোজিরায় থাকা সক্রিয় উপাদানগুলো প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করতে পারে কালোজিরা।

কালোজিরা থাকা ক্যালসিয়াম আয়রন হার শক্ত করতে ও রক্তের হিমোগ্লোবিন ঠিক রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত কালোজিরা খেলে ভালো থাকবে লিভার। কালোজিরাতে রয়েছে ইনফ্ল্যামেট উপাদান। নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার অস্বস্তি দূর করতে পারে এটি। আবার কালোজিরা তেল ইনহেলেশন এলার্জির ক্ষেত্রেও কাজে দেয়। এক চা চামচ মধুর সঙ্গে এক চা চামচ কালোজিরার তেল মিশিয়ে খেলে সর্দি কাশি থেকে রেহাই পাওয়া যায়। এছাড়া তুলসী পাতা রসের সঙ্গে মধু ও কালোজিরা মিশিয়ে খেলে গলা ব্যথা, জ্বর সর্দি কাশি কমে যায়।

কালোজিরার তেলের উপকারিতা

কালোজিরার বিশেষত্ব কালোজিরা তেলের উপকার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধি, হৃদরোগজনিত সমস্যার আশঙ্কা কমায়, ত্বকের সুস্বাস্থ্য,আর্থাইটিস ও মাংস পেশির ব্যাথা কমাতে কালোজিরা তেল উপযোগী। কালোজিরার শরীরের জন্য খুব জরুরী। পেটে যাবতীয় রোগ জীবাণু ও গ্যাস দূর করে এই কালোজিরা।

কালোজিরা কৃমি দূর করার জন্য কাজ করে। কালোজিরা তেলে আছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। গবেষণায় বলেছে রক্তচাপ ও রক্তের চর্বি নিয়ন্ত্রণ সহায়তা করতে পারে এই কালোজিরা তেল। অ্যাজমা ও ডায়াবেটিস রোগীর উপকার পেতে পারে, ওজন কমাতে ও মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ঠিক রাখতে ও এই তেল সহায়তা করে। চুলে বৃদ্ধি ত্বরান্বিত কমাতে ও কম বয়সে চুল পাখা ঠেকাতে সমপরিমাণ কালোজিরা তেল, কাস্টর অয়েল ও নারীকেল তেল নিন।
তিন রকমের তেল একসঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে মাথার ত্বক ও চুলে লাগান। সারারাত রেখে দিল ক্ষতি নেই। সপ্তাহে দুই তিনবার করে একটা না অন্তত দুই থেকে তিন মাস ব্যবহার করুন। কালোজিরা তেল স্মৃতিশক্তি বাড়ায় এবং হাঁপানি দূর করতেও সাহায্য করে। কালোজিরা তেল মাথা ব্যথা থেকে মুক্তি দেয়, জয়েন্টের ব্যথা কমায়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে, কিডনি রক্ষা করতে বেশ সাহায্য করে, দাঁত মজবুত করতে সাহায্য করে।

কালোজিরার অপকারিতা

কালোজিরা যেমন ভালো দিক রয়েছে তেমনি কালোজিরার কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও রয়েছে। অতিরিক্ত পরিমাণে কালোজিরা খাওয়ার ফলে শরীরে একাধিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। কালোজিরা তেল অতিরিক্ত পরিমাণে ত্বকে বা স্কিনে লাগালে এলার্জি হতে পারে। সেই জন্য পরিমাণ মতো কালোজিরার তেল ব্যবহার করা উচিত। কালোজিরা অতিরিক্ত পরিমানে সেবন করলে শরীরের রক্তচমাট বাধা কমে যেতে পারে। যার ফলে রক্তপাত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।

তাই অতিরিক্ত পরিমাণে কালোজিরা না খাওয়াই ভালো। অতিরিক্ত পরিমাণে কালোজিরা খেলে রক্তের শর্করা পরিমাণ কমে যেতে পারে। কালোজিরা অতিরিক্ত স্ক্রিনে লাগালে এটি এলার্জি সৃষ্টি হতে পারে। কালোজিরা বেশি খেলে পাকস্থলী সংকুচিত হয়ে বমি বমি ভাব ও বুক জ্বালাপোড়া করার সমস্যা দেখা দিতে পারে। কালোজিরা খাওয়ার ফলে গর্ভবতী মহিলাদের অকাল গর্ভপাতের সম্ভাবনা থেকে চাই।

কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা

অনেকেই কালোজিরা কাঁচা চিবিয়ে খেয়ে থাকেন। আপনি যেভাবে কালোজিরা খান না কেন কালোজিরার ঔষধি গুন কোন পরিবর্তন হয় না। কালোজিরা চিবিয়ে খেলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। তোকে স্বাস্থ্যের উন্নতি করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে। হজম শক্তি বাড়ায়। শ্বাসকষ্টে প্রকোপ কমায়। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। ত্বকে স্বাস্থ্যের উন্নতি করে। ঠান্ডা জনিত ও সর্দি কাশি জ্বর সারিয়া শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করে। শারীরিক কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে। নারী-পুরুষে জনশক্তি বৃদ্ধি করে।

কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম

কালোজিরা আমাদের সকলের একটি পরিচিত মসলা। এটি শুধু মসলায় নয় মসলার পাশাপাশি এটি তে রয়েছে অনেক গুণ যা বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ হিসেবে কাজ করে। কালোজিরা দুই উপায়ে খাওয়া যায়। একটি হলো এমনি কাঁচা চিবিয়ে আর অপরটি হল কোন কিছু সাথে মিশিয়ে খাওয়া।
কালোজিরার উপকারিতা এবং কালোজিরার খাওয়ার নিয়ম
কালোজিরা যেকোনো ভাবে খাওয়া যায় কিন্তু এটি খাওয়ার কিছু নিয়ম মেনে চললে আরো বেশি উপকার পাওয়া যায়। যেমন প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পানির সাথে অথবা মধুর সাথে মিশিয়ে ১ থেকে ২.৫০ গ্রাম কালোজিরা খাবেন। কালোজিরার ভর্তা করেও খেতে পারেন। তরকারির রান্নায় কালোজিরা দিয়ে খেতে পারেন। কাঁচা কালোজিরা ও চিবিয়ে খেতে পারেন। এছাড়াও কালোজিরা তেল খেতে পারেন।

প্রতিদিন সকালে খালি পেটে কালোজিরা মধুর সঙ্গে খেলে কি হয়

খালি পেটে কালো জিরা খাওয়ার পরে গবেষণায় দেখা গেছে এটি হজমে সাহায্য করে। কারণ এটি হজমকারি এনজাইমের উৎপাদন বাড়াতে পারে। এটি ফোলা ভাব এবং গ্যাস কমাতেও সাহায্য করে। তাছাড়া কালোজিরা খাদ্য থেকে পুষ্টি শোষণ উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে। কালোজিরা ও মধু খালি পেটে খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরো শক্তিশালী করে।

বাতের ব্যথা আরাম পেতে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে মধুর সঙ্গে কালোজিরা খেতে পারে। খালি পেটে মধু সঙ্গে কালোজিরা খেলে রক্ত সঞ্চালন, হৃদরোগ জনিত সমস্যার আশঙ্কা কমায় সর্দি কাশিতে আরাম পাওয়া যায়, ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

কালোজিরার পুষ্টি গুনাগুন ও উপাদান

কালোজিরার ভেতর প্রায় ১০০ টির বেশি উপাদান রয়েছে। তার মধ্যে আমাদের দেহের জন্য প্রয়োজনীয় অনেক উপাদানয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কালোজিরাতে বিদ্যামান। কালোজিরার মূল উপাদান গুলো প্রায় ৩৮ শতাংশ হচ্ছে শর্করা, ২১ শতাংশ আমিষ, ৩৫% তেল চর্বি এবং বাকিটা ভিটামিন ও খনিজ লবণে ভরপুর।
তবে ১০০ গ্রাম কালচিড়ায় যেগুলো উপাদান থাকে তা হল ভিটামিন বি ১(১৫মাইক্রোওগ্রাম), ফোলাসিন ৬১০ আইউ, ফসফরাস ৫.২৬ মিলিগ্রাম, জিংক ৬০ মাইক্রগ্রাম, প্রোটিন ২০৮ মাইক্রগ্রাম, ক্যালসিয়াম ১.৮৫ মাইক্রগ্রাম, আইরন ১০৫ মাইক্রগ্রাম, কপার ১৮ মাইক্রগ্রাম, নিয়াসিন ৫৭ মাইক্রগ্রাম, থাইমোকিনোন,নাইজেলোন, অ্যামিনো এসিড।

আমার মতামত

প্রিয় পাঠক আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আমি আপনাদেরকে কালোজিরার উপকারিতা এবং কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দিয়েছি। আমার এই ওয়েবসাইটটিতে আমি বিভিন্ন রকমের অথেন্টিক তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করি। নতুন নতুন বিভিন্ন রকমের তথ্য পাওয়ার জন্য আমারে ওয়েবসাইটি প্রতিনিয়ত ভিজিট করতি।

আপনার বন্ধুদের সঙ্গে আমার ওয়েবসাইটটি শেয়ার করুন যাতে করে আপনি যে রকম প্রতিদিন নতুন নতুন কোন তথ্য জানতে পারছেন। সেভাবে অন্য কেউ সবকিছু জানার সুযোগ করে দিন। আর কালোজিরার উপকারিতা এবং কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আপনার যদি কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে প্রশ্নটি করবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url