বয়লার মুরগি পালন ও পরিচর্যা
বয়লার এক বিশেষ ধরনের মুরগি যার রহস্য পৃথিবীর কেবল চারটি দেশই জানে এবং এই
চারটি দেশে সমস্ত জগতের বয়লার মুরগির ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে।
বয়লার আর সাধারণত পাঁচটা মুরগির মতো। তবে খুবই উঁচু যাতে যাদের সৃষ্টি করা
হয়েছে প্রচন্ড নির্বাচন এবং বংশগতি ধারার বিশেষ ক্রম অনুসারে।
ব্যবসায়ের জন্য বয়লার মুরগি নির্বাচন
একদিনের বাচ্চার ওজন হবে ৩৬ থেকে ৪০ গ্রাম। দেখা গেছে একদিনের বাচ্চা দেহের ওজন
যদি ভাল হয় তবে ব্যাচের সময় বয়লার মুরগির ওজন ভালই বাড়াবে। যদি ভালো বংশগতি
ধারার মুরগির বাচ্চা না হয় তবে ব্যবসায় খুব একটা সুবিধা হবে না। প্রায় সময়
দেখা যায় একদল বয়লার মুরগি অন্য দলের চেয়ে ভালো বাড়ে বেশি সংখ্যায় বাড়ে
সমান এবং বেশ ভাল পরিমাণে দেহে মাংস লাগাই সুষম খাদ্য খাওয়ার অনুপাতে। যে বাচ্চা
মুরগির প্রেরক অবশ্যই শৃঙ্খলের কায়দার মুরগির বাচ্চা দিয়ে যাবে।
এই নিয়মের ব্যতিক্রম হলেই সম্পূর্ণ ব্যবসাটি মার খাবে। আরো ভালো হয় যদি
হ্যাচারি সংস্থা সমপ্রসারণ এবং কারিগরি জ্ঞান দরকার পড়লে দিতে পারে। সুষম খাদ্য
খুব উঁচুদের হওয়া উচিত। অর্থাৎ খাওয়ার অনুপাতে দেহে যেন মাংস লাগে। খুব
তাড়াতাড়ি বাড়ার জন্য বয়লারের দরকার একই সঙ্গেউচু পর্দায় আমিষ এবং শক্তি বা
বেশি তাপ দিতে পারে এমন খাবার। ০-৬ সপ্তাহের বাচ্চার জন্য বয়লার সুষম খাদ্য
থাকবে প্রতি কেজি খাবারে আমি ২২.২৪% বিপাকীয় তাপ ২৯০০-৩০০০ কিলোক্যালরি।
যারে যাওয়ার আগে বয়লার মুরগির সুষম খাদ্য থাকবে ১৯-২০% বিপাকীয় তাপ ৩০০০-৩২০০
কিলোক্যালরি প্রতি কেজি খাবারে। বয়লার বাজারে যাওয়ার আগের খাবার ৫-৬ সপ্তাহ
বয়সে দেওয়া যেতে পারে। আমিষ বিশেষ করে এমাইনো এসিডগুলির মধ্যে লাইসিন এবং মেথিও
নাইন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এরা মুরগির বাড়ানোর জন্য সাহায্য করে।খাবার কে
মাংসে পরিণত করে। ফলে বয়লার ব্যবসায় পয়সা আসে।
আরো পড়ুনঃ অতিরিক্ত তাল খেলে কি হয়
বয়লার মুরগির খাবারে মোটা আসে শতকরা হার ৬ এর বেশি কখনোই হবে না। ভিটামিন A, B2,
D3, B12 এবং K ভীষন প্রয়োজনীয়। পটাশিয়াম ম্যাঙ্গানিজ জ সালফেট এবং জিঙ্ক
কার্বনেট পৃথকভাবে ভালো করে মিশিয়ে মুরগিকে খাওয়ানো উচিত। বয়লার মুরগির খাবারে
বীজঘ্ন নামমাত্র পরিমাণে মেশানো উচিত। লাভটা এই হবে বাচ্চা মুরগির দেহে সুপ্তভাবে
যদি কোন রোগ থেকে থাকে তবে এই বীজঘ্ন খাওয়াবার দরুন মুরগির দেহে চট করে
রোগাক্রমণ ঘটবে না।
বয়লার মুরগির জন্য খামারবাড়ি তৈরি করা
ঘরে মুরগি আসার আগে ঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা, ব্লো ল্যাম্প দিয়ে ফাক
ফোকরগুলিতে পোকামাকড় উকুন ছোট বড় এটুলি মেরে দেওয়া। বাচ্চা মুরগির জায়গা গরম
ব্যবস্থা, মুরগি আসবার ৪৮ ঘন্টা আগে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে নেওয়া উচিত। ব্লডারকে
খবরের কাগজ দিয়ে ঘিরে দিতে হবে। তাপমাত্রা হওয়া দরকার ৩৫০সেঃ (৯৫০ ফাঃ)।
খাবার এবং পানির জায়গা
প্রথম কয়েকদিন ডিম নেবার কার্টুনে খাবার দেওয়া হলে চলবে। বাচ্চা পিছু খাবার
জায়গা দিতে হবে ২.৫ সিমে (১”)। এই ব্যবস্থা চলবে বাচ্চার ১ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত।
প্রথম প্রথম খাবারে জায়গা পুরো ভরে দিলে চলবে। কিন্তু একটু বড় হয়ে যাওয়ার পর
খাবারে জায়গা আধা আধি ভর্তি করতে হবে। এভাবে চললে খাবার নষ্ট কম হবে। দিনে
চারবার খাবারের জায়গায় দখাবার দিলে চলবে।
খাবারের জায়গা বারবার ভরে দিলে মুরগি বাড়ে ভালো চার সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত মুরগি
প্রতি খাবারের জায়গা হবে ৫ সেমি। পরে বেড়ে সেটা দাঁড়াবে ৭.৫সেমি (৩”)। সমস্ত
দিনভর বাচ্চাদের পরিষ্কার ঠান্ডা পানি জুগিয়ে যেতে হবে। পানির জায়গা বেশি
সংখ্যায় দিতে হবে। মনে রাখতে হবে বাচ্চা ডিমপাড়া মুরগি থেকে বয়লার বাচ্চা বেশি
পানি খায়। গরমকালে বিশেষ করে গরম প্রবাহ চললে মুরগি প্রচুর পানি খেয়ে নিজেকে
ঠান্ডা করার চেষ্টা করে।
শাবক ঘর এবং শাবক ঘরের তাপমাত্রা
বাচ্চার ঝাঁক আসবার অন্তত ৪৮ ঘন্টা আগে ঘরটি পরিষ্কার করতে হবে। প্রথম সপ্তাহেবক
ঘরের তাপমাত্রা হবে ৩৫০ সেঃ (৯৫০ ফাঃ)। শাবক ঘরে তাপমাত্রা প্রতি সপ্তাহ ৫০ ফাঃ
বা ২.৮০ সেঃ হিসেবে কমানো যেতে পারে। সেটা অবশ্য নির্ভর করবে বাইরের আবহাওয়ার
ওপর।
বয়লার মুরগির জন্য খনিজ ও ভিটামিন
সত্যি কথা বলতে পরিমাণ এবং উৎকর্ষকতা দুটোই বয়লার মুরগী সুষম খাদ্য দরকার। আরো
দরকার খনিজ পদার্থের পরস্পরের মধ্যে সমঝোতা। এই সমঝোতা অবশ্যই খাদ্যের উপাদানের
সঙ্গে থাকা দরকার। খনিজ পদার্থের বেশি বা কম হওয়া দুটোই খনিজ পদার্থের মূল
উদ্দেশ্য দেহের বাড়কে ব্যাহত করবে। ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাসের মধ্যে সহযোগিতা
খুবই দরকারি।
খাবারের সমস্ত ক্যালসিয়াম যেন ১% গণ্ডি কখনো না পেয়ে যায়। ভিটামিন খাদ্য বিপাক
এবং বিশ্লেষণ বিশেষ সহযোগিতা দেখায়। ফলে মুরগি দেহের বার ঠিক থাকে। রোগ কম হয়।
প্রতিটি ভিটামিনের আলাদা আলাদা কাজ আছে যা একই বইতে পরবর্তীতে পরির্বতে
বিস্তৃতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
বয়লার মুরগি পালনে সমস্যা
বয়লার পালনে খামারি ভাইয়েরা যেভাবে সমস্যায় পড়েন সেগুলো হল গামবোরো রোগ, ওজনে
পার্থক্য (একই বয়সের বাচ্চা কিছু দিন পর ছোট-বড় হওয়া), সমন্বয়হীন
বাজারব্যবস্খা, খামারিদের ওষুধ ব্যবহারের প্রবণতা।
গামবোরো রোগ
খামারি ভাইয়েরা গামবোরো রোগ নিয়ে বেশি সমস্যায় পড়েন। গামবোরো ভাইরাসের কারণে
হয়। এই রোগের কার্যকরী কোন চিকিৎসা নেই। তবে সময় মত টিকা দেওয়া থাকলে রোগ
হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। এই রোগের আক্রমণ যদি ঘটেই থাকে তাহলে উন্নত ব্যবস্থাপনার
মাধ্যমে মৃত্যুহার কিছুটা কমানো যায়। এই রোগে আক্রান্ত মুরগি খাদ্য ও পানি
খাওয়া বাঁধ করে দেয়।
আরো পড়ুনঃ আনারস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
পালক উসকো-খুসকো দেখায়। সাদা পাতলা ও দুর্গন্ধযুক্ত পায়খানা করে। শরীর খুব
দুর্বল হয়ে পড়ে হাঁটতে পারে না। অবশেষে মারা যায়। তবে এই রোগে মৃত্যুহার ৩০
ভাগের বেশি হয় না। থাইয়ের গোশতে রক্তের ছিটা দেখা যায়। এ কই বয়সের বাচ্চা
প্রথমে বড় এবং পরে ছোট হয়ে যায় বাচ্চা কাটলে ভেতরে রক্তের ফোটা দেখা দেয়।
চিকিৎসা
গামবোরো রোগের কার্যকরী কোন চিকিৎসা নেই। প্রতিরোধ ব্যবস্থায় একমাত্র উপায়।
গামবোরো রোগ দেখা দিলে মুরগির ঘরে খাদ্য ও পানির পাত্র বাড়াতে হবে। কারণ এই রোগে
খাবারের প্রতি অরুচি ভাই না খেয়ে দুর্বল হয়ে মুরগি মারা যায়। তাই খাদ্য ও পানি
পাত্র এমনভাবে দিতে হবে যাতে ঘুরলে খাদ্য পাই। এই রোগে অরুচি ডিহাইড্রেশন এবং
মুরগি না খেয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে বলে পানিতে ভিটামিন সি স্যালাইন ও গ্লুকোজ
মিশিয়ে খাওয়ালে ভালো ফল পাওয়া যায়।
খামারিদের ওষুধ ব্যবহারের প্রবণতা
রক চিকিৎসা আছে প্রতিরোধ উত্তম একথাটা মুরগি পালনের ক্ষেত্রে বেশি যুক্তিযুক্ত।
অনেক খামারি জেনে না জেনে রোগ প্রতিরোধের জন্য বিভিন্ন ওষুধ খাওয়ান যা মোটেও ঠিক
না। অসুখ না হলে ওষুধ খাওয়ানো ঠিক নয়। প্রতিরোধের জন্য সময়মতো টিকা দিতে হবে।
সুস্থ মুরগিকে রোগ প্রতিরোধের নামে ওষুধ খাওয়ানোর ফলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যায় এমন
বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। এমনকি প্রতিরোধ শক্তিও কমে যেতে পারে। তাই প্রতিরোধের জন্য
ওষুধ না খাইয়ে সময় মতো টিকা দিতে হবে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url