ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা এবং ত্বকের যত্নে ড্রাগন ফল

ড্রাগন ফলের চাষ এখন দেশে হচ্ছে। ফলে এ দেখা মিলেছে এখন প্রায় সবখানেই। ড্রাগন ফল দুই ধরনের হয়। একটি ভেতরে অংশ লাল এবং অপরটির ভেতরে অংশ সাদা। দেখতে ও খেতে চমৎকার হওয়ার পাশাপাশি পুষ্টিগুণের দিক থেকে অনন্য ড্রাগন ফল।
ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা এবং ত্বকের যত্নে ড্রাগন ফল
ড্রাগন ফলের জনপ্রিয়তা ক্রমেই বাড়ছে। ৯০ এর দশক থেকে বাণিজ্যিক ভাবে এই ফলে প্রচলন শুরু হয় এই দেশে। অনেকে একে কমলম ও বলেন। বর্তমানে বাংলাদেশের ড্রাগন ফলে চাহিদা বাড়ছে তাই উৎপাদনও বাড়ছে।

ড্রাগন ফলের উপকারিতা

ড্রাগন ফল ভিটামিন খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এই ফলটির হজমে সহায়তা করে। রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখার পাশাপাশি ক্যান্সারে ঝুঁকি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এই ড্রাগন ফল। বেশ কিছু প্রয়োজনীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মিলে ড্রাগন ফল থেকে। এগুলো আমাদের সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। ড্রাগন ফল ফাইবার সমৃদ্ধ ও ফ্যাট ফ্রি। ফলে নিশ্চিন্তে ডায়েট লিস্টে রাখতে পারেন ড্রাগন ফল। প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি মেলে ড্রাগন ফল থেকে। নিয়মিত ড্রাগন ফল খেলে বারে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।

শরীরের জনক ক্ষতিকর ও উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সঠিক নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে ড্রাগন ফল। আইয়রনের চমৎকার উৎস রঙিন ড্রাগন ফল। রক্তশূন্যতা সমস্যা দূর করতে চাইলে প্রতিদিন ড্রাগন ফল খেতে হবে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভূমিকায় রয়েছে উপকারী এই ফলের। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে ড্রাগন ফল। ফলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে। ড্রাগনে রয়েছে বিটা ক্যারোটি। ন তাই বিটা ক্যারোটিন সমৃদ্ধ ফলটি নিয়মিত খেলে দৃষ্টিশক্তি ভালো থাকে ও ছানি পরা ঝুঁকি কমে। ড্রাগন ফলের ছোট কালো বীজে রয়েছে ওমেগা থ্রি ওমেগা নাইন ফ্যাটি অ্যাসিড। এগুলো হার্টের জন্য উপকারী। ড্রাগন ফল খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।

ড্রাগন ফলের অপকারিতা

ড্রাগন ফল যেমন উপকারী সেই সাথে এর রয়েছে কিছু ক্ষতিকর বা অপকারী বৈশিষ্ট্য। যাদের অ্যালার্জি সমস্যা রয়েছে ড্রাগন ফল খাওয়ার পরে এলার্জি বেড়ে যেতে পারে। যার ফলে অতিরিক্ত চুলকানি হতে পারে শরীর ফুলে যেতে পারে। তাই যাদের অ্যালার্জি সমস্যা রয়েছে তাদের ড্রাগন না খাওয়াই ভালো। ড্রাগন ফল হজম শক্তি বাড়িয়ে দেয়।
ড্রাগনে থাকা ফাইবার এর কারণে হজমের সমস্যা হতে পারে এবং সেখান থেকে ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যারা নিয়মিত ওষুধ খান তারা ড্রাগন ফল খাওয়ার আগে চিকিৎসকের কাছ থেকে পরামর্শ নিবেন। কারণ ড্রাগন ফল অন্যান্য ওষুধের সাথে মিশে দেহের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।গর্ভবতী ও স্তন্যদান কারী মায়েদের ড্রাগন ফল খাওয়ার আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।

ড্রাগন ফল খাবার নিয়ম

বিকল্প বিভিন্ন ধরনের ড্রাগন ফলের মধ্যে থেকে নির্বাচন করুন। এটি উত্তম মানের ফলে নির্বাচনে সাহায্য করবে। ড্রাগন ফলের বাইরের খোলের ওপর দেখুন। এটি উত্তম অবস্থায় হলে খাওয়ার যোগ্য হবে। যদি খোলে কোন ক্ষতি বা পচনযোগ্যতা দেখা যায় তবে ফলটি খাওয়া উচিত নয়। ফলটি ধীরে ধীরে খেতে হবে। জবাবদিহিতা সহকারে টুকরা টুকরা করে খাওয়া উচিত। ড্রাগন ফল পুরোপুরি পাকা হলেই খাওয়া উচিত। অপরিপূর্ণ পাখা ফল খাওয়া উচিত নয়।

পর্যাপ্ত পরিমাণে ড্রাগন ফল খাওয়া উচিত। মাঝারি পরিমাণে খাবার সেবন করলে উপকারিতা বেশি হবে। যদি আপনার কোন পূর্ব নির্ধারিত খাবার সংক্রান্ত সমস্যা থাকে তবে পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। ড্রাগন ফলের পরিবেশনা এবং সংরক্ষণে সাবধানতা অবলম্বন করুন। ফলটি পরিষ্কার ও পরিপূর্ণতা ভাবে ধুয়ে নিন আর মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বে নিশ্চিত করুন।

ত্বকের যত্নে ড্রাগন ফল

দেশেই চাষ হচ্ছে ড্রাগন ফল। ফলে এর সহজলভ্যতা বেড়েছে এখন অনেকটাই। ভিটামিন সি আইরন এবং ক্যালসিয়ামের মতো পুষ্টি উপাদান মেলে এই ফলে। ড্রাগন ফল যেমন স্বাস্থ্যের জন্য ভালো তেমনি ত্বকের জন্য সমান উপকারী। এই ফলের ফেসপ্যাক ব্যবহার করলে মিলবে অনেক উপকারিতা।মুখের বিভিন্ন ধরনের দাগ তুলতে সাহায্য করে এই ড্রাগন ফল। দীর্ঘদিন ত্বকের যত্নে এই ফল ব্যবহার করলে মুখে প্রাকৃতিক উজ্জ্বল আসে। ড্রাগন ফলের হাইড্রেটিং বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
ত্বকের যত্নে ড্রাগন ফল
এটি ব্যবহার করলে ত্বক ময়েশ্চারাইজড হয়। ফলে ত্বক থাকে নরম ও কোমল। ড্রাগন ফলে ভিটামিন বি৩ রয়েছে যা রোদে পোড়া ত্বকের যত্নে অনন্য। এছাড়া অতিবেগুনি রশনির কারণে হওয়া প্রদাহ লাল ভাব ও চুলকানি থেকে পরিত্রান করে। ড্রাগন ফল ব্রণ কমাতে সাহায্য করে। এতে থাকা ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বককে ভাঙতে বাধা দেয় এবং এটিকে আরও স্বাস্থ্যকর ও উজ্জ্বল রাখে। ড্রাগন ফলে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য।

এ ছাড়া ড্রাগন ফল ভিটামিন সি সমৃদ্ধ যা ত্বককে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। বলি দেখা ও সূক্ষ্ম রেখার সমস্যাও মেটায়। এই ফলটি ত্বক স্ক্রাব করতেও কাজ করে। ফলে সহজেই ত্বকের মৃত কোষ দূর হয়। ড্রাগন ফল ত্বকে জমে থাকা ময়লা দূর করে। ড্রাগন ফলের প্রদাহরোধী গুণ রয়েছে। এগুলো ত্বকের লালচে ভাব কমাতে সাহায্য করে। ড্রাগন ফলের ভিটামিন সি নিস্তেজ ত্বকের প্রাণ ফেলায়। ত্বক সতেজ ও পুনরুজ্জীবিত করতে এই ফলের ফেসপ্যাক নিয়মিত ব্যবহার করুন।

ড্রাগন ফলের খোসার উপকারিতা

অনেকেই না জেনে ভুল করে ড্রাগন ফলের খোশাগুলো ফেলে দেন কিন্তু এখন থেকে একদম ফেলবেন না। এই খোসা আপনার অনেক উপকারে আসতে পারে। ড্রাগন ফলের খোসা দিয়ে আপনার ত্বক সুন্দর ও আকর্ষণীয় করা সম্ভব সাথে চুল পড়া বন্ধ করতে পারেন। ড্রাগন ফলের খোসায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা নিমিষে কোষ্ঠকাঠিন্যর মত জটিল রোগ দূর করে সাথেই ত্বকে সুন্দর রাখতে সাহায্য করে।

চুলের যত্নে ড্রাগন ফলের খোসা

ড্রাগন ফলের খোসা থেকে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন পাওয়া যায়। আর প্রোটিন সরাসরি চুলের গোড়কের শক্ত করে এবং চুল পড়া বন্ধ করে। সাথেই চুলকে লম্বা ও ঘন করতে সহায়তা করে এর জন্য এখন থেকে চুলের যত্নে নিয়মিত ড্রাগন ফলের খোসা ব্যবহার করুন। বর্তমান সময় আমরা প্রত্যেকেই একই সমস্যায় ভুক্তভোগী। চুল পড়ে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কিন্তু খুবই মুশকিল আমাদের প্রত্যেকের চুল পড়ে। এই চুল পড়া যেন কোন কিছুতেই কমেনা।
তাই যারা আমার মত চুল পড়ার সমস্যায় রয়েছেন তারা নিয়মিত ড্রাগন ফলের খোসা ব্যবহার করুন। এক মুঠো মেথি ড্রাগন ফলের খোসা দুইটি তেজপাতা দুই থেকে তিনটা লং পেঁয়াজের খোসা। এই সমস্ত উপকরণগুলো একটি পাত্রে নিয়ে ৩০ মিনিট সিদ্ধ করুন তারপর পানি যখন হলুদ বর্ণ ধারণ করবে তখন সে পানিটি ঠান্ডা করে রাতে ঘুমানোর আগে মাথার স্ক্যাম্পে মেসেজ করুন। আপনার সুবিধার্থে চাইলে একটি স্প্রে বোতলে সংরক্ষণ করতে পারেন। ভালো ফলাফল পেতে সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ট্রাই করবেন।

ব্রণ দূর করতে ড্রাগন ফল

বাইরের দেশ থেকে আমদানি করা ফলগুলির মধ্যে এটি অন্যতম। তবে এই ফল এখন বাংলাদেশেই আবাদ হচ্ছে। এই ফল খেলে আপনার স্বাস্থ্য নিয়ে অনেক চিন্তা দূর হবে। রসালো এই ফলটি হল ড্রাগন ফল। ত্বকের উজ্জ্বল রং থেকে শুরু করে ওজন কমাতেও কার্যকরী ড্রাগন ফল। এটি দক্ষিণ আমেরিকার আদিবাসীদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটা ফল।

তবে ভিয়েতনাম থাইল্যান্ড এবং চিনেও এই ফল পাওয়া যায় এবং সেখানেও বেশ প্রিয় ফল এটি। আপনি যদি ব্রণজনিত সমস্যায় ভুগে থাকেন বা আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা কমে যায় তবে এই ফলটির কার্যকারিতা দেখে আপনি অনেকবিস্মিত হবেন। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। যা আপনার ত্বককে ব্রণের সমস্যা থেকে বের করে আনবে। সেই সাথে ব্রণের দাগ দূর করবে। এমনকি সক্রিয় ব্রণ যুক্ত অঞ্চল গুলোতে এই ফলের রস লাগিয়ে স্ক্রাব করলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
ত্বকের যত্নে ড্রাগন ফল
রোদে ঘুরে ত্বকে টান পড়ে গেলে। ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর সঙ্গে ১/৪ পিস ড্রাগন ফল মিশিয়ে নিন। এটি ত্বকে লাগিয়ে পনের মিনিটের জন্য রেখে দিন। তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। এছাড়া এক টেবিল চামচ ড্রাগন ফলের সঙ্গে এক টেবিল চামচ দই মিশিয়ে মিশ্রণটির মুখে লাগিয়ে নিতে হবে। চোখের নিচে বেশ পুরু করে লাগিয়ে ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে নিন। শুধু এটাই শেষ নয় ওজন বজায় রাখতে কিংবা হ্রাস করতেও সাহায্য করে। কারণ এই ফলের আশি শতাংশ পানি।

আমার মতামত

ড্রাগন ফল পুষ্টি উপাদানস সমৃদ্ধ একটি ফল। নানা রকম ভিটামিন আইরন ক্যালসিয়াম থাকায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সক্ষম এ ফলটি। প্রতিদিনের খাবারের ফলে হিসেবে ড্রাগন যোগ করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। এই ফলের উপকারিতা অনেক। তবে উপকার এর পাশাপাশি এই ফলের কিছু অপকারীয় রয়েছে। তাই আপনি যদি নিয়মিত ওষুধ খান তাহলে ড্রাগন ফল খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

প্রিয় পাঠক আজকের আর্টিকেলটি যদি আপনারা মনোযোগ দিয়ে পড়েন তাহলে অবশ্যই জেনেছেন দাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা ও ড্রাগন ফল দিয়ে ত্বকের যত্ন আরো অনেক কিছু। প্রিয় পাঠক আজকের আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনার অবশ্যই আপনার সুন্দর মন্তব্য দিয়ে জানাবেন। এবং আমার আর্টিকেলটি প্রতিদিন ভিজিট করবেন। আমার আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ।।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url