লেবু খাবার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
লেবু আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কাজে লাগে। লেবু খায় না এমন মানুষ নেই বললেই চলে।
দৈনন্দিন খাবার পরিবেশনে আমরা সালাত হিসেবে খেয়ে থাকি। অন্যান্য যাবতীয় কাজে
লেবু কম বেশি ব্যবহার করা হয়। লেবু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা দুটোই রয়েছে।
চুল থেকে শুরু করে রূপচর্চা, খাওয়া-দাওয়া পর্যন্ত সকল কাজে লেবু ব্যবহার করা
হয়। শুধু লেবু নয় লেবুর খোসা রূপচর্চার কাজে ব্যবহার করা হয়। লেবুর ঘষা ত্বকের
উজ্জ্বল করে তোলে।
লেবু খাওয়ার উপকারিতা
লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে যা দাঁতের ক্ষয় রোধ কমায়। লেবু খেলে
শরীরে ওজন কমাতে দ্রুত কাজ করে। লেবুর রস ত্বকের ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে।
লেবুর রস করে খেলে ক্যান্সার প্রতিরোধ করে এবং পরিপাকতন্ত্রের কার্যকর সুস্থ
রাখে। আলসার থেকে দূরে থাকতে লেবু খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে। ঠান্ডা লাগা এবং গলা
ব্যথা প্রতিরোধ করতে লেবু খাওয়ার কার্যকারিতা অনেক।
লেবুতে থাকা ভিটামিন সি যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ফলে লেবু পানি পান করলে তা শরীরের
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং শরীরের কোষকে ক্ষতিকর
ফ্রি-র্যাডিকেল থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। লেবু পানি শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে
সহায়তা করে। এটি শরীরকে ডিটক্সিফাই করে অর্থাৎ দূষিত পদার্থ শরীর থেকে বের করে
দিতে ভূমিকা রাখে। এছাড়াও দাঁত এবং মুখের ঘা দূর করতে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে
লেবু খাওয়ার উপকারিতা অনেক।
আপনার যদি গলা ব্যথা হয় হঠাৎ করে ঠান্ডা লেগে তাহলে খালি পেটে লেবুর রস খেতে
পারেন দেখবেন আপনার গলা ব্যাথা খুব দ্রুত ভালো হয়ে যাবে।গবেষণায় দেখা গেছে লেবু
পানি লিবারকে ক্ষতিকর উপাদান থেকে বাচায়।লেবু দেহের পুষ্টির ঘাটতি দূর করে।
লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা রক্তকে পরিষ্কার রাখে অর্থাৎ
রক্ত থেকে খারাপ ও বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ গুলোকে বাইরে বের করে দেয় যার ফলে
ত্বক হয় সুন্দর ও উজ্জ্বল। নিয়মিত লেবু খেলে কিডনিতে পাথর হওয়া র সম্ভাবনা
অনেকটাই কমে যায়
লেবু খাওয়ার অপকারিতা
দীর্ঘদিন ধরে লেবু খেলে মুখের মধ্যে থাকা নরম কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেখান থেকে
মুখের মধ্যে ফোঁড়া বা ফুসকুড়ি উভয়ের আশঙ্কা থাকে। সাইটিক এসিড সমৃদ্ধ যেকোনো
ফল খেলেই এই সমস্যা হতে পারে। ভিটামিন সি শরীরের জন্য প্রয়োজন কিন্তু অতিরিক্ত
ভালো না। অতিরিক্ত লেবু বা লেবুর রস খেলে সেখানে থেকে এসিড হবে সেই সঙ্গে বমি বমি
ভাব বা বমি হতে পারে। শুধুমাত্র লেবু পানি নয় যে কোনো ডিটক্স ডায়েট ড্রিংক থেকে
এই সমস্যা হতে পারে।
খাবার হজম করতে অনেকেই লেবুর রস পান করে থাকেন। কারো লেবুতে থাকায় এসিড হজমের
সহায়তা করে। কিন্তু অতিরিক্ত এসিডের কারণে ও পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই
সব সময় খাবারের সঙ্গে লেবু মিশিয়ে খাওয়া উচিত নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে লেবু বা
অন্যান্য সাইট্রাস জাতীয় ফল কোন ও ব্যক্তির মাইগ্রেনের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে
পারে। সাইট্রাস ফলগুলিতে থাকা টাইরা মাইন নামক একটি বিশেষ উপাদানের জন্য এমনটা
হয়।
আরো পড়ুনঃ অতিরিক্ত তাল খেলে কি হয়
ভিটামিন সি রক্তে আইরনকে সংরক্ষণ করতে সাহায্য করে। লেবু পানি অতিরিক্ত পান করলে
শরীরে ভিটামিন সি এর পরিমাণ বেড়ে যায় যা রক্তে অধিক পরিমাণ আয়রন সংরক্ষণ করে
যা ক্ষতিকর। গরমকালে ডিহাইড্রেশনের হাত থেকে বাঁচতে লেবুর পানি পান করে থাকেন
অনেকেই। কিন্তু এই লেবু পানি খাওয়ার ফলে আপনার শরীরে ডিহাইড্রেশনের সমস্যা দেখা
দিতে পারে। লেবু পানি পান করার ফলে ঘনঘন প্রসাব হয়। যা থেকে শরীরে পানি শূন্যতা
সৃষ্টি হয়। আসলে ইলেক্ট্রোলাইড এবং সোডিয়াম এর মতো উপাদান গুলো প্রসবের মাধ্যমে
শরীর থেকে নির্গত হয় যা ডিহাইড্রেশনের অন্যতম কারণ।
খালি পেটে লেবু খাওয়ার উপকারিতা
এক গ্লাস পানিতে কয়েক ফোটা লেবুর রস মিশিয়ে নিয়মিত খেলে অনেক উপকার পাওয়া
যায়। খালি পেটে লেবু পানি খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে যেমন হজম শক্তি বৃদ্ধি
করে। পুষ্টির অভাব দূর করে। ওজন কমাতে সহায়তা করে। শরীরের পানি শূন্যতা দূর করে।
টিবি রোগের চিকিৎসায় কাজে আসে। শরীরের ভেতরে পিএইচ লেভেল ঠিক রাখে।
হৃদরোগ ও স্টকে ঝুকি কমায়। বিপাকে সাহায্য করে সংক্রমণের প্রকোপ কমে। মুখের গন্ধ
হ্রাস করে। নিঃশ্বাসে সজীবতা আনে। স্ট্রেস ও ক্লান্তি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
লিভারের কার্যক্রম ঠিক রাখে। ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ায়। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে
সাহায্য করে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে ডায়াবেটিক রোগীর জন্য উপকারী এই লেবু।
তাই প্রতিদিন সকালে খালি পেটে নিয়মিত লেবু খেতে পারেন। নিয়মিত লেবু খেলে আপনি
এগুলো রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
লেবু পানি কখন খাওয়া উচিত
লেবু পানি শরীরে বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়া শরীরে বিভিন্ন
পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করতেও সাহায্য করে। কিন্তু লেবু পানি কখন খাওয়া উচিত এটা
সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। আপনি যদি সকালে ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস লেবু পানি খেতে
পারেন তাহলে আপনার হজম শক্তি অনেক বৃদ্ধি পাবে। আপনি যদি টক উজ্জ্বল ও টানটান
ডাকতে চান তাহলে প্রতিদিন লেবু পানি পান করতে পারেন। কারণ লেবুতে এমন কিছু
উপকারিতা রয়েছে যা আপনার তা উজ্জ্বল ও টানটান রাখতে সাহায্য করবে।
আপনি যদি আপনার শরীর ও মন সতেজ রাখতে চান তাহলে লেবু পানি পান করতে পারেন। কারণ
লেবু পানি পান করলে ক্লান্তি ভাব দূর করবে এবং শরীর ও মন সতেজ রাখতে সাহায্য
করবে। অনেকেই ভিটামিন সি এর ঘাটতি থাকে। ভিটামিন সি এর ঘাটতি পূরণ করে এই লেবু
পানি। তাই প্রতিদিন লেবু পানি পান করতে পারেন তাহলে আপনার ভিটামিন সি এর ঘাটতি
পূরণ করতে সাহায্য করবে এই লেবু পানি। কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা থাকলে আপনি লেবু পানি
পান করতে পারেন। লেবু পানি কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
চুলের যত্নে লেবুর রসের উপকারিতা
লেবুর রস চুলের জন্য দারুন উপকারি। লেবুর রয়েছে অনেক গুণ। ভিটামিন সি এর উৎস এই
ফলটি যেমন শরীর সুস্থ রাখে তেমনি ত্বক ও চুলের যত্নের ভূমিকা রয়েছে। হেয়ার
প্যাক হিসেবে লেবুর রস নিয়মিত ব্যবহার করলে চুল পড়া বন্ধ হয়। পাশাপাশি খুশকি
দূর করতে জুড়ি নেই। মরা চামড়া দূর করতে টুকরা লেবু, মাথার ত্বকে ঘষুন।
৫ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি মাথার তালুর মরা চামড়া দূর করবে
পাশাপাশি চুলে নিয়ে আসবে চমৎকার সুগন্ধ। চুল ঝলমলে করতে একটি পাত্রে ২ টেবিল
চামচ নারিকেলের তেল নিন। একটি আস্ত লেবুর রস মিশিয়ে তেলটি ফ্রিজে রাখুন। ঠান্ডা
মিশ্রণ চুলে লাগিয়ে মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে আঁচড়ে ইন। ১৫ মিনিট পর ঠাণ্ডা
পানিতে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত এভাবে ব্যবহার করলে চুল সিল্কি হবে। চুলের বৃদ্ধি
বাড়াতে নারিকেলের তেল জলপাইয়ের তেল ও লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে চুলে লাগা
নিয়মিত।
এটি নিয়মিত করলে ঝলমলে ভাব বাড়ায় পাশাপাশি তাড়াতাড়ি লম্বা করে চুল। আগা ফাটা
রোধ করতে লেবুর রস এবং জলপাই তেল এক সঙ্গে মিশিয়ে চুলের আগায় লাগান। ২০ মিনিট
পর ধুয়ে ফেলুন। তিন সপ্তাহে একবার করে করলে আগা থাকবে না। যদি লেবুর রস
কন্ডিশনার হিসেবে ব্যবহার করতে চান তাহলে লেবুর রস ও নারিকেলের পানি সমপরিমাণ
মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। প্রাকৃতিকভাবে চুল ঝলমলে করবে এই মিশ্রণ টি। খুশকি
দূর করতে চাইলে একটি লেবুর রস নিংড়েপানি মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি মাথায় তালুতে ও
চুলে লাগান। কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেলুন। লেবুতে থাকা অ্যাসিডিক উৎপাদন
প্রাকৃতিকভাবে দূর করবে খুশকি।
কুসুম গরম পানিতে লেবু মিশিয়ে খেলে কি ওজন কমে
ষ্টিবিদ জানান ওজন নিয়ন্ত্রণে আনার ক্ষেত্রে প্রথম কথা স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন
করা। কেউ যদি মনে করেন কেবল লেবু পানি পান করে ওজন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসবেন সেটা
সম্ভব নয়। সুষম খাবার ব্যায়াম পর্যাপ্ত ঘুম ইত্যাদি বিষয় মেনে চলার পাশাপাশি
লেবুর পানি পান করলে তা ওজন কমাতে সাহায্য করে। ওজন কমানোর ক্ষেত্রে শরীরের
বিপাকীয় হার বাড়তে পারলে ওজন দ্রুত কমে। পানির মত লেবু পানিও শরীরের বিপাকীয়
হাড় বাড়াতে সাহায্য করে।
আমাদের প্রায় সবাই সকালে ঘুম থেকে উঠে চা বা কফি পান করার অভ্যাস রয়েছে। যারা
ওজন কমাতে চান তারা সকালে চাপা কফির পরিবর্তে কুসুম গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে
পান করতে পারেন। এটি শরীরে বিপাকীয় হার বাডরায় এবং খাবার দ্রুত হজমে সাহায্য
করে। আবার খালি পেটে লেবু পানি পান করলে ক্ষুধাও তুলনামূলক কম লাগে। ফলে খাবার
গ্রহণের পরিমাণও কমে।
এভাবে শরীরে কম ক্যালরি প্রবেশ করে। এছাড়া লেবু পানি পান করার পর ব্যায়াম করলে
ক্যালরির ক্ষয়ের পরিমাণ বাড়ে। এভাবে লেবু পানি দ্রুত ওজন কমাতে সাহায্য করে।
যারা ওজন কমাতে চান তাদের অনেকে মিষ্টি জাতীয় শরবত সফট ড্রিংকসের প্রতি আকর্ষণ
থাকে। ওজন কমাতে চাইলে তখন এইসব পানীয় পরিহার করে লেবু পানি পান করতে হবে এতে
তৃষ্ণাও মিটবে আবার শরীরে ক্যালরিও কম প্রবেশ করবে।
লেবুর গুনাগুন
লেবুর পুষ্টিমান সম্পর্কে অনেকেরই জানা আছে। তবে পুরোপুরি বনের কথা হয়তো সবার
জানা নেই। একেক সময় একেক রকম লেবু পাওয়া যায় বাজারে। পাতিলেবু কমলা লেবু
গন্ধরাজ ও বাতাবি লেবু। ১০০ গ্রাম পাতি লেবু থেকে যেসব পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়
যা আপেলের ৩২ গুণ ও আঙ্গুরের দ্বিগুণ। আরো পাওয়া যায় ক্যালোরি ৯০ মিলিগ্রাম,
ভিটামিন এ ১৫ মাইক্রগ্রাম, ভিটামিন বি ০.১৫ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ২০ মিলিগ্রাম, লৌহ
০.৩ মিলিগ্রাম।
টাটকা লেবুর খোসাতেও পুষ্টি রয়েছে। প্রচন্ড গরমে এক গ্লাস ঠান্ডা লেবু শরবত দেহে
জন্য অত্যন্ত উপকারী এবং স্বস্তি ফিরে আনে। লেবু ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল। এই
ভিটামিন দেহে সঞ্চিত অবস্থায় থাকে না। সেজন্য শিশু বৃদ্ধি সবাইকে প্রতিদিনই
ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খাওয়া দরকার। জ্বর সর্দি কাশি ও ঠান্ডা জনিত সমস্যায়
লেবু অত্যন্ত কার্যকর। লেবুতে থাকা প্রচুর ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
লেবুতে পর্যাপ্ত ভিটামিন সি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে দেহে ক্যান্সার
সহ নানা প্রতিঘাতের হাত থেকে রক্ষা করে। শিশুদের দৈহিক ২০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি
প্রয়োজন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url